৬০ বছর ধরে মুসৌরির এই ধাবাতেই খেয়ে আসছেন তাবড় আইএএস অফিসাররা। আমলাদের কাছে এই ধাবা জনপ্রিয় বললেও কম বলা হবে।
১৯৫৯ সালে মুসৌরিতে প্রথম দ্য লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তৈরি হয়। মুসৌরির এই গঙ্গা ধাবার যে মালিক তিনি বলেন, তাঁর পরিবার প্রায় ৯০ বছর ধরে এখানে রয়েছেন। আর সে ভাবেই আইএস অফিসারদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
দ্য লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিভিল সার্ভিসের প্রশিক্ষণের জন্য অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তাও কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব পর্যায়ের কোনও অফিসার। এর ঠিক পাশেই রয়েছে এই ধাবা।
গঙ্গা ধাবার বর্তমান মালিক দীপক গর্গের বয়স ৬৫। তিনি বলেন, তাঁর ঠাকুরদা এখানে একটা হোটেলে খাবার সরবরাহকারীর কাজ করতেন। সে ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ বছর হল তাঁরা এই এলাকার মানুষের সুখাদ্যের চাহিদা পূর্ণ করছেন।
১৯৫৯ সালে যখন অ্যাকাডেমি তৈরি হল, ছোট্ট একটা চায়ের দোকান ছিল তাঁদের। ১৯৬৪ সালে দীপক হারান তাঁর বাবাকে। তখন আট বছর বয়স তাঁর। রয়েছে আরও তিন ভাই-বোন। মায়ের কাঁধে দায়িত্ব এসে পড়ে সংসারের।
স্থানীয় বালওয়াড়ি স্কুলে দীপকের মা গৃহবিজ্ঞান পড়িয়ে সংসার চালাতেন। আর ছিল সেই চায়ের দোকান। দীপক ও তাঁর ভাইবোনরাও সেই স্কুলেই পড়তেন।
১৯৭৮ সালে ওম চাইনিজ রেস্টোরেন্ট বলে একটি ফাস্ট ফুডের দোকান খোলেন তিনি। সেই সময় চাইনিজ খাবার সবে সবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। নিমেষেই প্রশিক্ষণ নিতে আসা ভবিষ্যতের আমলাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই খাবারের দোকান।
এর পর দীপক একটি পাবলিক কল অফিসও পান ১৭ বছর পর। হুহু করে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে সেই টেলিফোন বুথের। হবু অফিসার শিক্ষার্থীরা বাড়ির সঙ্গে দীপকের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন। প্রাক মোবাইল যুগে তাঁর ফোন বুথে ছিল প্রায় ১০টার বেশি টেলিফোন।
এর পর ওম চাইনিজ হোটেলের নাম বদলে যায় গঙ্গা ধাবায়। কারণ এটা গঙ্গা হোস্টেলের একেবারে পাশে। আর গঙ্গা নদীও খুব বেশি দূর নয় এখান থেকে।
তাঁর হোটেলের রান্নাঘরের বিভিন্ন পদে আমলাদের ‘হাতের ছোঁয়া’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দীপক। জানালেন, উত্তরাখণ্ডে দোসা বা ইডলির জনপ্রিয়তাও বেড়েছে অফিসারদের হাত ধরেই। ব্যাচ অনুযায়ী রান্নাঘরের স্বাদও বদলে যায়, জানান তিনি।
তবে এই ধাবার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার মোগলাই পরোটা ও আলু পেঁয়াজ পরোটা। সঙ্গে মধু ও আদা লেবু দিয়ে চা, বেটার ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন দীপক।
সকাল ৬টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত খোলা থাকে এই ধাবা। দীপক, তাঁর স্ত্রী সুষমা, ছেলে অভিষেক আর তাঁর স্ত্রী মিলে এক সঙ্গে রান্না করেন, কোনও রাঁধুনি নেই তাঁদের এখনও।
অফিসারদের সঙ্গে নিয়মিত অন্তাক্ষরীও খেলেন তাঁরা। সত্যিকারের গুণীরা নম্র হয়, এই অ্যাকাডেমি তাঁদের এটাই শিখিয়েছে, জানান দীপক। অফিসাররাও বলেন, “একটা আত্মিক যোগ তৈরি হয়ে গিয়েছে, কাজে ব্যস্ত হলেও খোঁজও রাখি আমরা দীপকের।”