প্রতীকী ছবি।
জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর কাছে ২০১৮-র পরে ২০১৯-এ পশ্চিমবঙ্গ থেকে মানুষ পাচার সংক্রান্ত নথি মেলেনি। ফলে পরপর দু’বছর একই নথি ধরা হয়েছে ওই পরিসংখ্যানে। আমেরিকার বিদেশ দফতরের সদ্য প্রকাশিত ২০২১-এর মানব পাচার সংক্রান্ত রিপোর্টে ভারত বিষয়ক পরিচ্ছেদে এমনটাই বলা হয়েছে। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “এই বিষয়ে পুলিশই বলতে পারবে।” কিন্তু রাজ্য পুলিশের কাছে সদুত্তর মেলেনি।
সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশেই পাচার সংক্রান্ত ফিরিস্তিতে বাস্তব এবং কাগুজে তথ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাকের দিকেই আঙুল তুলেছে আমেরিকার রিপোর্ট। পাচার মোকাবিলায় নানা স্তরে সমন্বয়ের অভাব। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসেব মিলিয়ে অন্তত ৮০ লক্ষ মানুষ পাচারের শিকার। তবে সরকারের হাতে তেমন সামগ্রিক হিসেব নেই। হোমগুলিতে অডিট কার্যত হয় না। বিশেষ করে ‘বন্ডেড লেবার’ বা বেগার শ্রমিকদের সঙ্কটকে পাচার বলে স্বীকার করতেই এ দেশে অনেকেরই দ্বিধা রয়েছে এখনও। কেন্দ্রীয় শ্রম ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক ২০১৯-এ সংসদে ১৯৭৬ থেকে সেই সময় পর্যন্ত বেগার শ্রমিক হিসেবে তিন লক্ষের কিছু বেশি জনের নথি পেশ করেছিল।
২০১৯-এও প্রমাণাভাবে পাচারের ঘটনায় ৭৩ শতাংশ অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। অভিযোগ, অতিমারির আবহে অর্থনৈতিক অসহায়তায় পাচার প্রবণতা আরও বেড়েছে। পাচারের ফাঁদ ছড়িয়েছে নেট-ভুবনেও। তবে আমেরিকার বিদেশ দফতরের রিপোর্টটিতে, পাচার মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে টিয়ার-২-তে রয়েছে ভারত-সহ উপমহাদেশের বেশির ভাগ দেশই। অর্থাৎ পাচার মোকাবিলায় যা করণীয়, তা করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকলেও কিছুটা চেষ্টা করেছে ভারত।
করোনা পরিস্থিতিতে কেন্দ্র অবশ্য অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে। দেশের ৭৩২টি জেলার মধ্যে ৩৩২টি জেলায় পাচার রোধে এই ব্যবস্থা আছে। তবে রিপোর্টে প্রকাশ, এর ৭৩% নাম-কা-ওয়াস্তে। গত ডিসেম্বর থেকে ১০০ কোটি টাকায় বাংলাদেশ, নেপাল সীমান্তে পাচার রুখতে নজরদারি এবং পাচার রোধের ইউনিট গড়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে। তখন থেকেই মনস্তত্ত্ববিদ, আইনজীবী, সমাজকর্মীদের রেখে ১০ হাজারটি থানায় মহিলা হেল্প ডেস্কও গড়া হচ্ছে।
২০২০-তে একটি পাচারের ঘটনায় কলকাতা জেলা পরিষেবা কর্তৃপক্ষ নির্যাতিতার মানসিক যন্ত্রণা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ শিক্ষার কথা ভেবে ৮,৭৬,৪১০ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করে। তবে দেশে পাচার মামলায় ক্ষতিপূরণের হার ২০১৮ পর্যন্ত এক শতাংশ। বাংলায় গত বছরের ৯০টি মামলায় নির্দেশ থাকলেও ক্ষতিপূরণের টাকা বকেয়া। পাচারে প্রভাবশালীদের জড়েয়া পড়ার ঘটনাও বিস্তর। বিহারে শিশু কল্যাণ সমিতির এক সভাপতিও অভিযুক্ত।