বছর ঘুরতে চলল। লগ্নির চাকা ঘুরল না।
অর্থনীতিতে ‘আচ্ছে দিন’ আনার আসল চাবিকাঠি— নতুন বিনিয়োগ যথেষ্ট গতিতে আসছে না কেন, এই প্রশ্ন এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লির নর্থ ব্লক থেকে সাউথ ব্লকের অন্দরমহলে।
শিল্পমহল থেকে অর্থনীতিবিদ, সকলেই মানছেন যে, নরেন্দ্র মোদী সরকার লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে চেষ্টার কোনও কসুর করেনি। নতুন বিনিয়োগ আনার জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘স্মার্ট সিটি’, ‘ভারত মালা’-র মতো বড় মাপের প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। মনমোহন সরকারের জমানায় পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র জোগাড় করা শিল্পমহলের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ছাড়পত্র এখন অনলাইনেই মিলছে। শিল্প ও ব্যবসায় লাল ফিতের ফাঁস কাটাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। কয়লা ও খনিজের অভাবে বহু প্রকল্প আটকে ছিল। কয়লা খনি নিলাম ও খনি বিল পাশ করিয়ে সেই সমস্যাও কাটানোর চেষ্টা করেছে মোদী
সরকার। শিল্পপতিদের সুবিধার্থে শ্রম আইনের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। রেল পরিকাঠামো, বিমা থেকে প্রতিরক্ষার মতো একাধিক ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের দরজাও খুলে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তারপরেও যে নতুন লগ্নি এসেছে, তা নরেন্দ্র মোদী সরকারের কেউই বড়াই করে বলতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বক্তব্য, ‘‘২০১৩-’১৪ সালে ২০৮০ কোটি ডলার বিদেশি লগ্নি এসেছিল। ২০১৪-’১৫-য় এসেছে ২৮৮০ কোটি ডলার।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, এ দেশের শিল্পপতিরা যথেষ্ট পরিমাণে নতুন বিনিয়োগ করছেন না। রিজার্ভ
ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন মন্তব্য করেছেন, ‘‘নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু তার গতি আরও বেশি হওয়া দরকার।’’
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শিল্পের জন্য ঋণ নেওয়া বাড়ছে ঢিমেতালে। যে-সব সংস্থা কারখানার যন্ত্রাংশের মতো মূলধনী পণ্য তৈরি করে, তাদের লাভের খাতার ছবিটা মোটেই ভাল নয়। ট্রাক-লরির মতো পণ্যবাহী বাহন বিক্রিও তেমন ভাবে বাড়ছে না। এর কোনওটাই শিল্পের উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরছে না। মূল্যায়ন সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি খুবই দুর্বল। কর্পোরেট সংস্থাগুলির আয়ও তেমন ভাবে বাড়ছে না। যে-সব বড় মাপের প্রকল্প আটকে রয়েছে, সেগুলি মোদী সরকার চালু করতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে ওই সংস্থা।
কেন আসছে না বিনিয়োগ? বণিকসভাগুলির সমীক্ষা বলছে, কর্পোরেট সংস্থাগুলির খাতায় বিদেশি ঋণের বোঝা চেপে রয়েছে। আদায় না-হওয়া ঋণের চাপে এখনও ব্যাঙ্কগুলি ধুঁকছে। বেসরকারি লগ্নির এই অভাব পূরণ করতে পারছে না সরকারি লগ্নি। এর মধ্যে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারী বিভিন্ন বিদেশি আর্থিক সংস্থাকে পুরনো করের নোটিস পাঠানোর ফলে ভুল বার্তা গিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনও বলেছেন, ‘‘কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো আর একটু ভাল ভাবে সামলানো যেত।’’ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘নতুন পরিকাঠামো, স্মার্ট সিটি বা শিল্প করিডর তৈরির ক্ষেত্রে ইউপিএ-সরকারের জমি আইন বড় বাধা। আমরা সেই বাধাই কাটানোর চেষ্টা করছি।’’
শিল্পমহলের কর্তারা বলছেন, আগামী কয়েকটা মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। শ্রম আইন সংস্কার করার যে-স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা কাগজে-কলমে করে দেখাতে হবে। নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প সফল করে কারখানায় উৎপাদন বাড়লেই কর্মসংস্থান তৈরি হবে। মোদী সরকারের পক্ষে ‘আচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সহজ হবে।