শ্বেতাম্বরী শর্মা
কাঠুয়া গণধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তকারী দলে একমাত্র মহিলা অফিসার ছিলেন তিনি। তদন্তে বহু বাধা এসেছে। পঠানকোট আদালতের রায় জানার পরে ডিএসপি শ্বেতাম্বরী শর্মার বক্তব্য, ‘‘তদন্ত ব্যর্থ করতে সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি।’’
কাঠুয়ায় বকরওয়াল সম্প্রদায়ের বালিকার গণধর্ষণ ও খুনের মামলা নিয়ে হইচইয়ের জেরে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন হয়। সিটের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন আইজি অলোক পুরী ও অপরাধদমন শাখার প্রাক্তন সিনিয়র সুপার রমেশকুমার জল্লা। সিটে ছিলেন অতিরিক্ত সুপার নাভেদ পীরজ়াদা, শ্বেতাম্বরী, সাব ইনস্পেক্টর ইরফান ওয়ানি, ইনস্পেক্টর কে কে গুপ্ত ও এএসআই তারিক আহমেদ।
শ্বেতাম্বরী বলছেন, ‘‘তদন্তে এত বাধা আসছিল যে আমরা মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। যখন জানতে পারলাম মামলা ভন্ডুল করতে হিরানগর থানার পুলিশকর্মীদেরও ঘুষ দেওয়া হয়েছে তখন সত্যিই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওই পুলিশকর্মীরা প্রমাণ নষ্ট করে দিয়েছিল।’’
২০১২ ব্যাচের জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সার্ভিস অফিসার শ্বেতাম্বরী বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে ম্যানেজমেন্ট পড়াতেন। পিএইচডি করার সময়েই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সার্ভিসের পরীক্ষা দেন। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযুক্তেরা সকলেই জম্মুর হিন্দু। অনেক ভাবে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে তারা আর আমরা একই সম্প্রদায়ের। তাই মুসলিম মেয়ের ধর্ষণ-খুনের জন্য নিজের সম্প্রদায়ের কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়। এমনকি ঘুষ দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে।’’ শ্বেতাম্বরী বলছেন, ‘‘জবাব দিয়েছিলাম পুলিশ অফিসার হিসেবে আমার ধর্ম হল আমার উর্দি।’’ তাঁর দাবি, এ ভাবে তাঁকে প্রভাবিত করতে না পেরে ব্ল্যাকমেল আর ভীতিপ্রদর্শনের রাস্তাও নিয়েছিল অভিযুক্তদের সমর্থকেরা। তাঁর বাড়ির কাছে মিছিলও বার করা হয়। কিন্তু তাতে দমেননি শ্বেতাম্বরী ও তাঁর সহকর্মীরা।
সাঞ্জী রাম-সহ অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন লাল সিংহের মতো বিজেপি নেতা ও জম্মুর কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রধানেরা। তার জেরে লাল সিংহকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধেও তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। জম্মুর আদালতে চার্জশিট পেশে বাধা দেন আইনজীবীদের একাংশ। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোটের নির্দেশে মামলা পঞ্জাবের পঠানকোটে সরানো হয়। চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।
তবে সাঞ্জী রামের ছেলে বিশাল জনগোত্র মুক্তি পাওয়ায় দুঃখিত প্রাক্তন সুপার রমেশকুমার জল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘সাঞ্জী রামের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম আমরা। বিশালের কথা জানতে চাইলে সাঞ্জী গলা চড়িয়ে বলে তার ছেলে মেরঠে পড়াশোনা করছে। প্রয়োজনে বিশালের কল ডিটেলস খতিয়ে দেখতে বলে সে। তখনই খটকা লেগেছিল।’’ জল্লার বক্তব্য, ‘‘আমার মনে হয়েছিল হঠাৎ সাঞ্জী কল ডিটেলস দেখতে বলছে কেন?’’ তাঁর আশা, বিশালের মুক্তির বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।