প্রতীকী ছবি
করোনা সংক্রমণ থেকেই সুস্থ হলেই বাজিমাত! গোড়াতে এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সেই আশাতেও এ বার কার্যত জল ঢালছেন চিকিৎসকেরা। করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে রোগীদের একাংশের শারীরিক অবস্থার নতুন করে অবনতি, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
দেখা গিয়েছে, মৃদু উপসর্গ ছিল যাঁদের, তাঁরাও সুস্থ হওয়ার বেশ কিছু দিন পরে আক্রান্ত হচ্ছেন নানাবিধ জটিল শারীরিক সমস্যায়। যেমন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গত সপ্তাহেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত কাল মাঝরাতে অসুস্থতার কারণে আজ ফের ভর্তি হন এমসে। তার পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। করোনামুক্তির পরেও কী ধাঁচের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা নিয়ে এখন বিস্তারিত তথ্য জোগাড়ে নেমেছে কেন্দ্র। গড়া হয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটিও।
এমনটি যে হতে পারে, তা নিয়ে অবশ্য গত জুনেই সতর্ক করেছিলেন এমসের চিকিৎসকেরা। দেশে করোনা সংক্রমণের বয়স তখন চার মাস। সে সময়ে দিল্লির এমসের চিকিৎসকেরা দেখেন, যে সব রোগীদের ভেন্টিলেশন বা অক্সিজেন দিতে হয়েছে, পরবর্তী সময়ে তাঁদের ফুসফুসে ক্ষতচিহ্ন দেখা যাচ্ছে। অনেকের ফুসফুসে ফাইব্রোসিস ধরা পড়ে। যার ফলে ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়। এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়ার কথায়, ‘‘পরবর্তী সময়ে ওই রোগীদের প্রবল শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।’’ চিকিৎসকদের মতে, রোগীদের একাংশের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমার প্রবণতা ধরা পড়ায় সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও বাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হয়।
আরও পড়ুন: হোম বন্ধ করতে গিয়ে হেনস্থা এড্স রোগীদের
করোনা প্রভাব ফেলছে কিডনিতেও। স্কটল্যান্ডে কোভিড রোগীদের উপরে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সংক্রমণের উপসর্গ যাঁদের প্রবল ছিল, তাঁদের প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশের পরবর্তী সময়ে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যাঁরা আইসিইউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের অন্তত ৩০ শতাংশের পরে কিডনির গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। অনেককেই ডায়ালিসিস করাতে হয়। ভারতে এ ধাঁচের কোনও সমীক্ষা এখনও হয়নি বলে আজ স্বীকার করে নেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নতুন। কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁদের সংক্রমণ গুরুতর, ভেন্টিলেটর বা আইসিইইউ-তে ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ফুসফুসে ক্ষত, রক্ত জমাট বাঁধা, কিডনির সমস্যার মতো বিষয়গুলি বেশি দেখা যাচ্ছে। মূলত যাঁরা কো-মর্বিড অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে কোনও জটিল রোগে ভুগছেন, তাঁদেরই আইসিইউ বা ভেন্টিলেটরে দিতে হয়। মোট আক্রান্তের মধ্যে এঁদের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ শতাংশ।
এমসের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক নীরজ নিশ্চল বলেন, ‘‘যাঁরা ভেন্টিলেটরে ছিলেন, তাঁদেরই পরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, যাঁদের মৃদু উপসর্গ ছিল, তাঁদেরও পরবর্তী সময়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।’’ করোনা সংক্রমণে একাধিক অঙ্গ বিকল হলে তবেই ভেন্টিলেটরের সাহায্য নেওয়া হয়। সেই রোগীরা শারীরিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় তাঁদের পরবর্তী সময়ে অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু মৃদু উপসর্গদের কেন পরে শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে— সেটাই এখন দেখার।
গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হল রক্তবাহী নালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া। চিকিৎসকদের মতে, গুরুতর আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের সময়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার বাড়ি যাওয়ার পরেও অনেকের ওই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই কারণে উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের শারীরিক অসুবিধা হলে শুরুতেই কোঅ্যাগুলেন্ট প্রোফাইল করে রক্তে কোনও অস্বভাবিকতা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষার প্রয়োজন বলে সুপারিশ করছেন চিকিসকেরা। একই সঙ্গে করোনা মুক্ত হওয়ার পরেও পরামর্শ মেনে অন্তত চার থেকে ছয় দিন রক্ত তরল করার ওষুধ খেয়ে যাওয়া উচিত বলেই মত চিকিৎসকদের।
ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার মতো করোনাও শরীর দুর্বল করে দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ডেঙ্গি শয্যাশায়ী করে দেয় রোগীদের। চিকুনগুনিয়া রোগে দুর্বলতার সঙ্গে হাত-পা সহ শরীরের গাঁটে দীর্ঘদিন ব্যথা থাকে। চিকিৎসক নীরজ নিশ্চল বলেন, ‘‘করোনার ক্ষেত্রেও অনেকেই অল্পে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কাজ করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছেন। মনঃসংযোগ করতে পারছেন না। দু’সপ্তাহের বেশি হাসপাতাল বা ঘরবন্দি থাকায় মেজাজ হারানো ছাড়াও অনেকের অন্য মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’ প্রয়োজনে তাই মনোবিদদের সাহায্য নেওয়ার সুপারিশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে আক্রান্ত
সূত্র: ওয়ার্ল্ডোমিটার্স
২৭,৬৬,৬২৬
মঙ্গলবারের করোনা বুলেটিন।
সূত্র: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক
২৭,০২,৭৪২
মৃত ৫১,৭৯৭
সুস্থ ১৯,৭৭,৭৭৯