বিদায়ী: নিজের বক্তৃতা সঙ্কলনের প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায়। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে। পিটিআই
বিদায়ের একদিন আগে নরেন্দ্র মোদী বললেন, প্রণবদার আমলে রাষ্ট্রপতি ভবন ‘লোকভবন’ হয়েছে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ বক্তৃতাতেও পরোক্ষে মোদীকে ‘সহিষ্ণুতা’ আর ‘বহুত্ববাদে’র পাঠই পড়িয়ে গেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণবের বক্তৃতা-সংকলনের চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রণবের প্রাজ্ঞতা, সারল্য ও অভিভাবকত্বের তারিফ করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘প্রণব আমাকে পথ দেখিয়েছেন, আমার অনেক ভুল শুধরে দিয়েছেন। আমার মধ্যে বদল এনেছেন।’’ কোবিন্দও ছিলেন সেখানে। তার আগে আজ জাতির উদ্দেশে শেষবারের জন্য বক্তৃতা দিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। আর তাতে প্রণব শোনালেন সে-সব কথাই, যা নিয়ে মোদী আমলে বিতর্ক তুঙ্গে।
প্রণব বললেন, প্রতিদিন চারদিকে হিংসা বাড়ছে। এই হিংসার শিকড়ে আছে ভয় আর অবিশ্বাস। ভারতের আত্মা থাকে বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতায়। বিভিন্ন মতকে গ্রহণ করতে না পারলে ভাবনার মৌলিক চরিত্রটাই থাকে না।
গতকাল সংসদে সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে গণতন্ত্র নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন। আলোচনা ছাড়া সংসদে বিল পাশ করা, অধ্যাদেশ জারি করার প্রবণতা নিয়েও সরকারকে সরাসরি বিঁধেছিলেন। আজ তার জবাব দিতে কলম ধরেন সরকারে মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি। আপাদমস্তক প্রণবের প্রশস্তির ফাঁকেও জেটলি সুকৌশলে জোর দেন একটি ক্ষমতা-কেন্দ্রের উপযোগিতার কথায়। বলেন, সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে প্রণবও বুঝতে পেরেছেন, গণতন্ত্রে নির্বাচিত সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর হাতেই একটি ক্ষমতাকেন্দ্র থাকা দরকার। সে কারণেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দু’টি সরকারের (অতীতে ইউপিএ ও এখন এনডিএ) সঙ্গে সমান ভাবে সহজ হতে পেরেছেন তিনি।
বিজেপির ব্যাখ্যা, আসলে জেটলি বোঝাতে চেয়েছেন ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়েও ক্ষমতাকেন্দ্র ছিল সনিয়া গাঁধীর হাতে। সেটি ঠিক নয়। আজ নরেন্দ্র মোদীর হাতে যদি গোটা ক্ষমতা থাকে, সেটিও ভুল নয়। মোদী নিজেও এ দিন প্রণবের সামনেই বলেছেন, ভিন্ন বিচারধারার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ যে মোদীতোই আস্থা রেখেছেন। সে কথা সব সময় মানতেন প্রণব।
আর কংগ্রেস বলছে, মোদীর এই অহঙ্কারকেই বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। বিদায়বেলাতেও বলে গেলেন, মহাত্মা গাঁধী এক বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সংবিধানপ্রণেতারা জাতি, সম্প্রদায় ভেদ করেননি। আধুনিক দেশের ভিত আছে সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সব আস্থার সমান স্বাধীনতার।
এর পরেও কি টনক নড়বে নরেন্দ্র মোদীর?