Bengaluru Cafe Blast

প্রাণ পেয়েছে রামেশ্বরম কাফে, তবুও বদনাম

বিস্ফোরণের পরে তদন্তকারী এবং পুলিশের যা করা উচিত ছিল, তারা তা-ই করেছে বলে মনে করেন মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতারা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২৩
Share:

জমজমাট রামেশ্বরম কাফে। — নিজস্ব চিত্র।

নিউ দিঘা! কাঁথি! পূর্ব মেদিনীপুর! এমন সব জায়গার নাম ওঁদের জানা নেই।

Advertisement

বিস্ফোরণের কথা তুলতেই অবশ্য ওঁরা বুঝে নেন, দুই মক্কেল বাংলা থেকে ধরা পড়েছে বটে! ‘‘কত লোক এখানে খেতে আসে। দুপুরের খাওয়ার ভিড়টা একটু বেশিই হয়। চারপাশে এত অফিস। এর মধ্যে কে কোথায় কী ভাবে একটা ব্যাগ নামিয়ে রেখে যাবে, কী ভাবে বোঝা যাবে!’’ হাত-পা নেড়ে অসহায়তা বোঝাচ্ছিলেন এক নিরাপত্তারক্ষী।

এখন অবশ্য ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর বসেছে। বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর হাতে ধরিয়েও। মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাওয়ার সময়ে দর্শকদের যে পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, কফি বা খাদ্য-প্রার্থীদের জন্যও এখন একই ব্যবস্থা।

Advertisement

অকুস্থল রামেশ্বরম কাফে। ব্রুকফিল্ড। যেখানে গত ১ মার্চ আইইডি বিস্ফোরণে জখম হয়েছিলেন ১০ জন। ঘটনায় দুই মূল অভিযুক্ত মুসাভির হোসেন শাজিব এবং আবদুল মথিন আহমেদ ত্বহাকে পূর্ব মেদিনীপুরের নিউ দিঘা থেকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। সঙ্গে ছিল কর্নাটক, কেরল ও তামিলনাড়ু পুলিশ। কলকাতার আদালতের অনুমতি নিয়ে ধৃত দু’জনকে কয়েক দিন আগে বেঙ্গালুরু এনেছিল এনআইএ, জেরা এবং তদন্তের বাকি সুতো গুটোনোর জন্য।

বেঙ্গালুরু-সহ দক্ষিণ ভারতের একাধিক শহর জুড়ে রামেশ্বরম কাফে ছড়িয়ে। বেঙ্গালুরুতেই তাদের একাধিক আউটলেট। বেঙ্গালুরুর ব্রুকফিল্ড বোঝাতে বলা যেতে পারে কলকাতার যেমন বিধাননগরের সেক্টর ফাইভ, অনেকটা তেমন। তবে তার চেয়ে ব্যস্ত।

বিস্ফোরণের ওই ঘটনা ঘিরে ভোটের মরসুমে রাজনৈতিক উত্তাপ রামেশ্বরম কাফের চেন-এর চেয়ে বেশিই ছড়িয়ে পড়েছে! শাজিব এবং ত্বহা গ্রেফতার হওয়ার পরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘গদ্দারদের জায়গায় লুকিয়েছিল! দু’ঘণ্টায় ধরে দিয়েছি!’’ অর্থাৎ এক ঢিলে রাজ্য পুলিশকে কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। উল্টো দিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে বাংলা কেমন দেশ-বিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী শক্তির নিরাপদ ‘আশ্রয়’, সেই প্রশ্ন তুলে সরব বিজেপি।

‘সন্ত্রাসকে প্রশ্রয়’ দেওয়ার অভিযোগের সুর ঘটনাস্থলের রাজ্যে আরও তুঙ্গে! বিরোধী দলনেতা, বিজেপির আর অশোক ওই বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের পদত্যাগেরই দাবি করে দিয়েছেন! বিজেপির রাজ্য সভাপতি বি ইয়েদুরাপ্পা বিজয়েন্দ্র থেকে দলের সর্বভারতীয় যুব সভাপতি তেজস্বী সূর্যদের তোপ, কংগ্রেসের ‘তোষণ রাজনীতি’র ফলেই এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। তাঁদের মতে, ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গালুরু’ এখন হয়ে গিয়েছে ‘বম্ব বেঙ্গালুরু’!

কর্নাটকের পুলিশমন্ত্রী গঙ্গাধরাইয়া পরমেশ্বর ঠান্ডা মাথার রাজনীতিক। তিনি পাল্টা বলছেন, ‘‘উন্মাদ না হলে এ সব কথা কেউ বলতে পারে! ধৃত দু’জনের মধ্যে এক জন ২০২০ সাল থেকে ফেরার। কাফের ঘটনার পরে ৩৫টা সিম কার্ড ব্যবহার করে তারা নানা রাজ্যে আস্তানা নিচ্ছিল। এনআইএ এবং কর্নাটক পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে। শিবমোগার বিস্ফোরণেও এরাই ছিল মনে হচ্ছে, এ বার কিনারা হয়ে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, শাজিব ও ত্বহার আদি বাড়ি শিবমোগারই তীর্থহাল্লিতে।

বিস্ফোরণের পরে তদন্তকারী এবং পুলিশের যা করা উচিত ছিল, তারা তা-ই করেছে বলে মনে করেন মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতারা। ঘটনার জেরে শহরবাসীর মধ্যে প্রাথমিক ভাবে আতঙ্ক ছড়ালেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। রাজনীতির ভবি তবু ভুলবার নয়! বিজেপি নেতারা দাবি করেই চলেছেন, দেশ ও মানুষের সুরক্ষা নিয়ে তাঁরাই শুধু ভাবিত। সিদ্দারামাইয়া, এম কে স্ট্যালিন, পিনারাই বিজয়ন, মমতা-সহ বাকি অন্য দলের সবাই ‘তোষণে’র জন্য সন্ত্রাসবাদকে বাড়তে দিচ্ছেন।

ব্রুকফিল্ডে অটো নিয়ে দাঁড়ানো থাঙ্কাচানের মুখে সার কথাটা শোনা গেল। ‘‘এই শহরে কত লোক! দেশে কোটি কোটি। কোথায় কে উৎপাত বাধিয়ে দেয়, সেটা দিয়ে রাজনীতির কথা বলে কী হবে?’’ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কর্মী মহলও কাফেতে যথারীতি লাইন দিয়ে ভিতরে ঢুকছে। বাইরে পড়ে থাকছে রাজনীতির তরজা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement