অমাবস্যার রাতেই বলি বন্ধ ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে

রাজ আমলের দুর্গাবাড়িতে মহালয়ার সকালেই পাঁঠা বলি বন্ধ করা হল। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ এই রাজ্যে পশু ও পাখি বলি বন্ধের রায় দেয়।

Advertisement

বাপি রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০১
Share:

উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির। —নিজস্ব চিত্র

ত্রিপুরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরেও বন্ধ হল বলি। প্রাচীন রীতি মেনে অমাবস্যার রাতে পাঁচটি পাঁঠা এবং একটি মহিষ বলি দেওয়ার কথা ছিল। তবে জেলাশাসক প্রাণেশলাল চাকমা শনিবার জানান, আদালতের রায়ে তাঁরাও মন্দিরে বলি বন্ধ রাখবেন। যদিও দুপুর পর্যন্ত সরকারি আদেশ না-পৌঁছনোয়, সকালে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে বলি হয়েছে।

Advertisement

রাজ আমলের দুর্গাবাড়িতে মহালয়ার সকালেই পাঁঠা বলি বন্ধ করা হল। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ এই রাজ্যে পশু ও পাখি বলি বন্ধের রায় দেয়। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় যে সব মন্দির রয়েছে, সেখানে আজ থেকেই আদালতের আদেশ কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক অফিসের সিনিয়র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নান্টুরঞ্জন দাস। কিছু দিন পরে দুর্গাপুজো, তার আগেই পশ্চিম জেলার সমস্ত মন্দিরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিস বোর্ড লাগানো হবে। রাজপরিবারের চতুর্দশ দেবতা মন্দিরেও বলি বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে পাঁঠা ও পায়রা বলি দেওয়ার রীতি ছিল এত দিন। ওই মন্দিরের পুরোহিত সজল চক্রবর্তী বলেন, “আদালতের আদেশ কোনও ভাবেই অমান্য করা যাবে না।’’

হাইকোর্টের এই রায়ে ত্রিপুরায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ এই প্রথা বন্ধের বিরোধী। তবে অনেকেই এই রায়ে খুশি।

Advertisement

তাঁদের কারও মত, সপ্তদশ শতকের ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যের স্বপ্নাদেশেই রবীন্দ্রনাথ রাজর্ষি উপন্যাস ও তা থেকে পরে বিসর্জন নাটক লেখেন। যে কাহিনিতে গোবিন্দমাণিক্য বলিবন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নিজে বলেছেন, তাঁর স্বপ্নে রাজা নয়, এসেছিল এক বালিকা। তাঁর জীবনেও তখন সদ্য এসেছে প্রথমা কন্যা মাধুরীলতা। জীবনস্মৃতিতে তিনি লিখেছিলেন, দেওঘর থেকে কলকাতা ফেরার পথে রাতে ট্রেনে স্বপ্ন দেখেছিলেন, “কোন্ এক মন্দিরের সিঁড়ির উপর বলির রক্তচিহ্ন দেখিয়া একটি বালিকা অত্যন্ত করুণ ব্যাকুলতার সঙ্গে তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে—‘বাবা, এ কি! এ যে রক্ত!’…এই স্বপ্নটির সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যের ইতিহাস মিশাইয়া রাজর্ষি গল্প লেখেন।’’ উল্লেখ্য সুধাংশুবিকাশ রায়কে চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “গোবিন্দমাণিক্যের জীববলি নিষেধ ইতিহাসে কোথাও নেই। উহা আমার কল্পনামাত্র।’’ রবীন্দ্রনাথের কথায় তাঁর সমকালীন ত্রিপুরাধিপতি বীরচন্দ্র মাণিক্য ত্রিপুরার রাজবংশের ইতিহাস, রাজরত্নাকর-এর যে অংশ পাঠিয়েছিলেন, তাতেও ‘মহারাজা গোবিন্দমাণিক্যস্য চরিতম্’-এও গোবিন্দমাণিক্যের এমন কোনও নির্দেশের কথা নেই।

রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ বিকচ চৌধুরী বলেন, “রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাটকে মন্দিরে জীব হত্যার বিরুদ্ধে মানবতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement