দুই বিপরীতমুখী পথে হেঁটে দলের রাজনৈতিক লাইন তৈরি করেছিলেন প্রকাশ কারাট ও সীতরাম ইয়েচুরি।—ফাইল চিত্র।
প্রাক্তনকে শুনতে হত, কেন পিছোলেন! বর্তমানকে শুনতে হচ্ছে, কেন এগোলেন!
দুই বিপরীতমুখী পথে হেঁটে দলের রাজনৈতিক লাইন তৈরি করেছিলেন প্রকাশ কারাট ও সীতরাম ইয়েচুরি। তাঁর কংগ্রেস-বিরোধী লাইনের জন্য বাম মহলেই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খুলে পরিস্থিতির ফেরে সেই বাম মহলেই এখন নানা কটাক্ষ চলছে সিপিএমের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির প্রতি!এবং দু’রকম সমালোচনারই উৎসকেন্দ্র এই বাংলা!
পরমাণু চুক্তিকে ঘিরে মতবিরোধের জেরে মনমোহন সিংহের সরকারের উপর থেকে বামেদের সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারাট। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম-কাণ্ড নিয়ে উত্তাল বাংলায় তার পরেই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট এবং ১০ বছর আগের লোকসভা নির্বাচন থেকে সেই জোটের ধাক্কায় বামেদের পতনের শুরু। কারাট সমর্থন প্রত্যাহার করে কংগ্রেসকে তৃণমূলের দিকে এগোনোর সুযোগ করে দিয়েছেন, এই সমালোচনায় সিপিএমের ভিতরে এবং বাইরে বারবার সরব হয়েছেন বাম নেতা-কর্মীরা। এ রাজ্য থেকেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ কে জি ভবনে গাদাগাদা চিঠি পাঠিয়েছিলেন সিপিএম কর্মীরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে সমদূরত্বের কারাট-লাইন ঘোরানোর জন্য গত কয়েক বছরে সিপিএমের অন্দরে প্রবল লড়াই করেছেন ইয়েচুরি। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের জমানায় বিজেপিই যে প্রধান বিপদ এবং তার মোকাবিলায় কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে বোঝাপড়া দরকার— এই যুক্তিতে শেষমেশ গত বছর হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে দলের সিলমোহর আদায় করেছিলেন ইয়েচুরি। সঙ্গে ছিলেন বাংলার নেতারা। এ বার লোকসভা ভোটের আগে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিও প্রস্তাব নিয়ে বাংলায় আসন সমঝোতার চেষ্টাকে মান্যতা দিয়েছে, যা তারা ২০১৬ সালে দিতে চায়নি।
কিন্তু এত কিছুর পরেও বাংলায় বামেদের দিক থেকে ‘হাত’ সরিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। বামেদের উদ্দেশে কংগ্রেস নেতারা নানা কটাক্ষ, বিদ্রুপও করেছেন। বিহার বা মহারাষ্ট্রের মতো অন্য কিছু রাজ্যেও কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সমঝোতা ধাক্কা খেয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই সিপিএম, বাম শরিকদের একাংশ এবং বামফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলির নেতারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, কংগ্রসের এই ‘চরিত্র’ মাথায় রাখা উচিত ছিল। আগ বাড়িয়ে কংগ্রেসের দিকে এগিয়ে গিয়ে আম ও ছালা দুই-ই হারাতে হল!
আলিমুদ্দিনের নেতারা অবশ্য এখনও বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে তিন বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপিকে৮.৫%-এ বেঁধে রাখা গিয়েছিল। আসন সংখ্যা নয়, সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা দেখতে হবে এই নিরিখে। বাম মহলের এমন বিবাদ নিয়ে কারাট মুখ খুলতে নারাজ। তবে কারাট-ঘনিষ্ঠ এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলে ব্যক্তি কোনও বিষয় নয়। যখন পার্টি লাইন যেমন থাকে, সেই অনুযায়ীই নেতারা কাজ করেন।’’ সমালোচনা গায়ে না মেখে ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘বিজেপিকে ঠেকানোই এখন প্রধান কাজ। সেই লক্ষ্যে আমরা যথাসাধ্য লড়াই করব।’’
মুখে তাঁরা বলবেন না ঠিকই। তবে ঘটনা বলছে, দুই সম্পাদকের বিধিই আসলে বাম!