প্রতীকী ছবি।
অসুস্থ স্বামীকে ফেলে রেখে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে কিছুতেই নামবেন না ষাটোর্ধ্ব শান্তিদেবী। আর মা, বাবাকে নামাতে না পেরে মেয়ে অনুপ্রিয়াও জেদ করে বসে থাকেন। বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছেড়ে যাবে না। শেষ পর্যন্ত কোয়েলের তোড়ে রোগী ও রোগীর পরিজনদের নিয়েই ভেসে গেল অ্যাম্বুল্যান্সটা!
ভেসে গেলেন রোগী গোপালপ্রসাদ, শান্তিদেবী, অনুপ্রিয়া ও তাঁদের সঙ্গী কৌশল কিশোরও। লোহারদাগার ডিসি বিনোদ কুমার বলেন, ‘‘ফুঁসতে থাকা কোয়েল নদী থেকে এখনও পর্যন্ত চার জনের কোনও খোঁজ নেই। কোনও রকমে সাঁতরে বেঁচে গিয়েছেন চালক ও অনুপ্রিয়ার স্বামী রাজেশ রজক।’’
ঝাড়খণ্ডের অন্য অংশের মতোই গত চার দিন ধরে লোহারদাগার সেন্হা এলাকাতেও মুষলধারায় টানা বৃষ্টি চলছে। কিন্তু গোপালপ্রসাদকে বাধ্য হয়েই রাঁচীর রিমসে নিয়ে যাচ্ছিল তাঁর পরিবার। রাজেশবাবুর কথায়, ‘‘গত রাতে শ্বশুরমশাইয়ের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়। স্থানীয় চিকিৎসক রাঁচীর রিমস হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।’’ রাত দশটা নাগাদ রাঁচীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তাঁরা।
লোহারদাগার একটু আগে, সেতুর উপর দিয়ে তখন বইছে কোয়েল নদী। রাজেশবাবু জানান, ভয় লাগছিল ঠিকই, কিন্তু অসুস্থ মানুষটার কথা ভেবে তাঁরা সেতু পেরনোর ঝুঁকি নেন। কিন্তু সেতুর মাঝামাঝি অ্যাম্বুল্যান্স আটকে যায়। রাজেশবাবু বলেন, ‘‘চিৎকার করে গ্রামের মানুষদের ডাকতে থাকি। কয়েকজন গ্রামবাসী সেতুর ওপারে আসেন। কিন্তু আমাদের জলের মধ্যে আটকা দেখেও ওরা সেতুতে নামতে ভরসা পাননি।’’
টানা বৃষ্টিতে ঝাড়খণ্ডের প্রায় সব নদীই ভযঙ্কর হয়ে উঠেছে। শুধু অ্যাম্বুল্যান্স নয় রামগড়ের গোলার কাছে স্থানীয় সিনেগাড়হা নদীর জলে ভেসে গিয়েছে একটি সেডান গাড়িও। ওই গাড়িতে করে আজ সকালে রাঁচী থেকে বোকারো ফিরছিলেন ওসামা ও শুভম মিশ্র নামে দুই কলেজ ছাত্র। গোলার কাছে সিনহেগাড়হা নদীর জল সেতুর ওপর দিয়ে বইছিল। সেতু পেরোতে গিয়ে জলস্রোতে ভেসে যায় গাড়িটি। ওসামার দেহ পাওয়া গিয়েছে। শুভম এখনও নিঁখোজ।