বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার। — পিটিআই।
সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবন চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মণিপুরে দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার। ওই ঘটনার জন্য দেশের ১৪০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।’’ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় তিনি ব্যথিত এবং ক্রুদ্ধ বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মণিপুরের পাশাপাশি রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বার্তা দেন তিনি। পাশাপাশি, সংসদের কাজের সময়ের সদ্ব্যবহারের জন্য আবেদন জানান বিরোধীদের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘আশা করব আমাদের সরকারের জনমুখী বিলগুলি সাংসদেরা সমর্থন করবেন।’’
মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) প্রকাশ্যে আসার পরে দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অধিকাংশ বিরোধী দল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের ইস্তফা দাবি করেছে। পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠেছে মণিপুরে দীর্ঘ আড়াই মাসে হিংসাপর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে। এই আবহেই বৃহস্পতিবার শুরু হল সংসদের বাদল অধিবেশন। মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেসের পক্ষে বৃহস্পতিবার নোটিস দেওয়া হয়েছে লোকসভা এবং রাজ্যসভায়।
এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মণিপুরে গত ৭৮ দিন ধরে হিংসা চলছে। কেন্দ্র এবং সে রাজ্যের সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।’’ তিনি জানান, মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সংসদে সরব হবেন বিরোধীরা। পাশাপাশি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের হার বাড়ার মতো বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনার দাবি জানানো হবে। আগামী ১১ অগস্ট পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় মোদী সরকারের শেষ বাদল অধিবেশন। সেখানে ৩১টি বিল সংসদে পাশ করানো হতে পারে। এর মধ্যে নতুন পেশ হতে পারে ২১টি বিল। যার মধ্যে রয়েছে দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত বিলটি।
এ ছাড়াও তথ্য সুরক্ষা আইন, রাজ্যের পাশাপাশি জাতীয় স্তরে জন্ম-মৃত্যুর নথিভুক্তিকরণের মতো বিতর্কিত বিলগুলি। সূত্রের মতে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বিরোধীদের। বিতর্ক হতে পারে বন সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল নিয়েও। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাদল অধিবেশনে পেশের অনুমোদন পেয়েছে দু’টি নতুন বিল। মধ্যস্থতা বিল ২০২১ এবং পত্রপত্রিকার জন্য প্রেস ও রেজিস্ট্রেশন বিল ২০২৩। নতুন প্রেস এবং রেজিস্ট্রেশন বিল সংসদে পাশ হলে তা ১৮৬৭ সালের প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অব বুকস আইনের স্থলাভিষিক্ত হবে। এর ফলে অনলাইনেই নতুন সংবাদপত্র বা সাময়িক পত্রের জন্য আবেদন করা যাবে। চলতি ব্যবস্থায় কোনও নতুন কাগজ বা পত্রিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রকাশক এবং মুদ্রকের তরফে প্রথমে জেলাশাসকের কাছে আবেদন এবং হলফনামা দাখিল করতে হয়। জেলাশাসক সেই আবেদন পাঠান রেজিস্ট্রার অব নিউজ়পেপারস ইন ইন্ডিয়া-র (আরএনআই) কাছে। তারা খতিয়ে দেখে, নতুন পত্রিকার জন্য বেছে নেওয়া নামটি আদৌ পাওয়া যাবে কি না। অনলাইন ব্যবস্থায় এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার আর কোনও প্রয়োজন থাকবে না।
বুধবার বিরোধীদের বক্তব্যের মূল দাবিই ছিল, মণিপুর প্রশ্নে অবস্থান স্পষ্ট করুক নরেন্দ্র মোদী সরকার। লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বাদল অধিবেশনে মুলতুবি প্রস্তাব এনে মণিপুর নিয়ে আলোচনা ও প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস।’’ সূত্রের খবর, অন্য দলগুলিও কংগ্রেসের ওই দাবিকে সমর্থন করে। বিরোধীরা যেমন মণিপুর প্রশ্নে সরব হওয়ার কৌশল নিয়েছে, তেমনই পাল্টা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার বিষয়টি সংসদে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। বুধবারই বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার পক্ষ। সূত্রের খবর, সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বৈঠকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, মণিপুর-সহ বিরোধীদের তোলা সব বিষয়ে আলোচনায় রাজি সরকার। বিজেপি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে বিষয়টি তুলে সরব হবে সরকার পক্ষ।