— প্রতীকী চিত্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠনগুলির চাপ আসছে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি ‘ডকট্রিন’ বা মতাদর্শগত নতুন ভাষ্য তৈরি করার জন্য। উদ্দেশ্য হল, সে দেশের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা, যাতে তারা ‘শত্রুর’ মোকাবিলা করতে বাড়তি উদ্দীপ্ত হয়। নয়াদিল্লির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে, একটি সমান্তরাল সামরিক নেতৃত্ব তৈরির প্রস্তাবও কট্টর ইসলামপন্থীরা দিচ্ছে, যারা নাকি ‘স্বাধীনমনস্ক’ হবে। ভারতের কথায় ওঠবোস করবে না।
বাংলাদেশের কট্টরপন্থী অংশের মুখপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধের দিকে এখন নজর রাখছে নয়াদিল্লি। কট্টরপন্থীরা বারবার শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে দোষ দিচ্ছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ক্রমশ দুর্বল এবং বশংবদ করে তোলার জন্য। পাশাপাশি দাবি উঠছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) আঞ্চলিক অধিকর্তার পদ থেকেহাসিনার কন্যা, সালমা ওয়াজেদের মনোনয়ন যাতে বাতিল করা হয়।
প্রশ্ন হল, এই নতুন ‘ডকট্রিন’ বা মতাদর্শগত ভাষ্যের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? বিশেষজ্ঞেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কিছু দিন আগেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চেয়ে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। অন্য দিকে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীও জানিয়েছেন ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সামরিক সম্পর্ক ‘চমৎকার’ রয়েছে। কূটনৈতিক মহলের খবর, দেশের অভ্যন্তরে বেশ কিছুটা চাপে রয়েছেন ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। কারণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে আরও মেরু তৈরি হয়েছে। যে মেরুটি ভারত-বিরোধী হিসেবে সক্রিয়, তার নেতৃত্বে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ ফাইজুর রহমান। সূত্রের বক্তব্য, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ইউনূস সরকারের কিছু উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র কমিটির কিছু নেতা এবং সমাজের কট্টরপন্থী অংশের। এমনও শোনা যাচ্ছে, ওয়াকার-উজ়-জ়ামানবিদেশে থাকাকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে সরানোর যে প্রয়াস হয়েছিল, তার অন্যতম রূপকার ছিলেন এই রহমান। এমনকি ওয়াকার-উজ়-জ়ামানকেও ভবিষ্যতে সরানোর পরিকল্পনা রয়েছে এই অংশের।
বাংলাদেশ সেনার ইতিহাসে ২০টিরও বেশি অভ্যুত্থানের ঘটনা রয়েছে সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের গোড়া পর্যন্ত। আপাতত সে দেশের অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হয়, সে দিকেনজর রাখছে ভারত। সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী এবং নেতৃত্বের গুরুত্ব এখন যথেষ্ট, সেটা জানে সাউথ ব্লক। এই পরিস্থিতিতে নতুন ‘ডকট্রিনের’ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।