উদ্বোধনের অপেক্ষায় শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন
শান্তিনিকেতনে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ ভবন। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের ভোট রাজনীতির জটিলতায় আপাতত আটকে রয়েছে সে কাজ।
২০১০-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগেই ওই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় দু’দেশ। ঠিক হয়, শান্তিনিকেতনে ভবন তৈরির জন্য জমি দেবে বিশ্বভারতী। আর ভবন তৈরির জন্য যে ২৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে তা দেবে বাংলাদেশ সরকার। শান্তিনিকেতনে চিনা সরকার ও বিশ্বভারতীর যৌথ উদ্যোগে চিনা ভাষা পঠনপাঠনের জন্য চিনা ভবন বা জাপানি ভাষার জন্য নিপ্পন ভবন রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ ভবনটি দু’দেশের ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথ-মুজিবর রহমানের মতো ব্যক্তিত্বদের কর্মকাণ্ড, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করতে আসার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু দু’দেশের ভোট রাজনীতির টানাপড়েনে আপাতত থমকে গিয়েছে উদ্বোধন।
দু’দেশের প্রাথমিক ভাবে লক্ষ্য ছিল ১৭ মার্চ, মুজিবর রহমানের জন্মদিনের দিন বাংলাদেশ ভবনটির উদ্বোধন করার। সম্প্রতি দিল্লি এসে বাংলাদেশ ভবন যে প্রস্তুত তা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে জানিয়ে যান বিশ্বভারতীর অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য সবুজকলি সেন। কিন্তু সমস্যা হল, দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শেষ সফরে ভারতে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র বলছে, প্রটোকল মেনে এরপর ঢাকা যাওয়ার কথা নরেন্দ্র মোদীর। সেই সফর না হওয়া পর্যন্ত হাসিনার পক্ষে ভারতে আসাটা প্রটোকলে আটকায়।
তবে এতে শাপে বর হয়েছে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। এ বছরের শেষে বাংলাদেশে নির্বাচন। এই সময়ে হাসিনা যদি ভারতে আসেন, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে। মূলত পশ্চিমবঙ্গের আপত্তিতে ওই চুক্তি আটকে রয়েছে। ফলে তিস্তা প্রসঙ্গ তুলে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে পারে বিরোধী বিএনপি বা জামাত শিবির। এতে ঘরোয়া রাজনীতিতে অস্বস্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে হাসিনা সরকারের। এ দেশেও লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। আপাতত তাই বাংলাদেশে নির্বাচনের পরে যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনিই ওই ভবনের উদ্বোধন করবেন বলে বিশ্বভারতীকে জানিয়েছে কেন্দ্র।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে বাংলাদেশ ভবনে একটি গ্রন্থাগার, আলোচনা কক্ষ ও প্রেক্ষাগৃহ, ডিজিটাল মিউজিয়াম, ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষণাগার, স্টুডিও ও রেকর্ড রুম থাকবে। ওই ভবনে মূলত শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত বিষয়ের উপরে গবেষণা করার ব্যবস্থা করা হবে। দু’দেশের মধ্যে এ বিষয়ে যে মউ স্বাক্ষর হয় তাতে বলা হয়েছে ওই ভবনে একটি ছবির গ্যালারি থাকবে। যেখানে ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে (দ্বারকানাথ থেকে রবীন্দ্রনাথ) বাংলাদেশের সম্পর্ক ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।