গোপালকৃষ্ণ গাঁধী।
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে গোটা দেশ সরগরম। একের পর এক সাহিত্যিক সাহিত্য অকাদেমির পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
গোপালকৃষ্ণ গাঁধী আনন্দবাজারের জন্য কলম ধরে মনে করিয়ে দিলেন, জালিয়ানওয়ালা বাগের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইটহুড খেতাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কাইজার-এ-হিন্দ মেডেল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী।
সেই গোপালকৃষ্ণ গাঁধীই আজ ১৮টি বিরোধী দলের হয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে ভোটের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে রাজি হলেন। শুধু একটি পদের ভোট নয়। এই ভোটকে রাজনৈতিক আদর্শের লড়াই হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছেন বিরোধীরা। গোপালকৃষ্ণও তাতে রাজি হয়েছেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রার্থীপদ গ্রহণে যতখানি গুরুত্ব দেওয়া দরকার, ততখানি গুরুত্ব দিয়েই আমি তা নিচ্ছি।’’ বিরোধী দলগুলি যে ‘একতা’ ও ‘বিশ্বাসে’র সঙ্গে তাঁকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করেছেন, তাকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন মোহনদাস গাঁধীর পৌত্র।
মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে গোপালকৃষ্ণকে প্রশ্ন করা হয়, কেন তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন? তিনি বলেছেন, ‘‘আমার প্রার্থীপদ কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও নয়। কিন্তু এই লড়াই সন্দেহ আর ঘৃণার বিরুদ্ধে। ভারতের সংহতি এবং বহুত্ববাদী সংস্কৃতির পক্ষে আমার লড়াই।’’ তাঁর মতে, ‘‘এটা এমন একটা সময় যখন গোটা দেশের উচিত নিজেকে প্রশ্ন করা, হিংসার এই পরিবেশ কী ভাবে রোখা সম্ভব?’’
আরও পড়ুন: ক্ষুব্ধ মোদী, তরজা শুরু সরকারেই
আজ বিরোধী দলগুলির বৈঠকে সনিয়া গাঁধীর প্রারম্ভিক কথার পরেই তৃণমূলের তরফে ডেরেক ও’ব্রায়েন গোপালকৃষ্ণের নাম প্রস্তাব করেন। সকলেই তাতে সম্মতি জানান। এর পর গুলাম নবি আজাদ, সীতারাম ইয়েচুরি ও ডেরেক— তিন জন মিলে গোপালকে ফোন করেন। তখন হরিয়ানার অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছিলেন গোপালকৃষ্ণ। সেখানেই ইতিহাস ও রাজনীতির অধ্যাপনা করেন তিনি। গোপাল ১৫ মিনিট সময় চেয়ে নেন। জানতে চান, ১৮টি দলেরই তাঁর প্রতি সমর্থন রয়েছে কি না। তার পর সম্মতি জানিয়ে বিরোধী নেতাদের ধন্যবাদ জানান। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে একসময় সিঙ্গুর নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলোচনায় বসিয়েছিলেন তিনি। আজ তৃণমূল ও সিপিএম, দু’দলের নেতারাই দাবি করেছেন, গোপালকৃষ্ণর কথা প্রথমে তাঁরাই ভেবেছেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবেও গোপালকৃষ্ণর নাম আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু এনডিএ দলিত মুখ হিসেবে রামনাথ কোবিন্দকে প্রার্থী করায় নিজেই সীতারাম ইয়েচুরিকে জানিয়েছিলেন, বিরোধীদেরও এ বার অন্য পথে ভাবা দরকার। বিরোধীদেরও যে দলিত কাউকেই প্রার্থী করতে হবে, তা আগেই আঁচ করেছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, দেশের প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনের সচিব হিসেবে কাজ করেছিলেন গোপালকৃষ্ণ। আইএএস হিসেবে অবসর নেওয়ার পরে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদে থাকার পাশাপাশি এই দায়িত্বও সামলান তিনি। আজ এক নিবন্ধে লিখেছেন, এমন এক জন রাষ্ট্রপতি দরকার, যিনি ভারত সম্পর্কে অপ্রিয় সত্য বলবেন। ভাবী রাষ্ট্রপতির ধর্ম, জাত, রাজনৈতিক প্রবণতা যা-ই হোক না কেন, খোলাখুলি নির্ভীক ভাবে তাঁকে রাষ্ট্র ও সমাজের সঙ্গে একই ভাবে কথা বলতে হবে।