প্রতীকী ছবি
মানবদেহে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ জুলাই। সে দিন তো কবেই পেরিয়ে গিয়েছে! কিন্তু এত দিনে দেশে মাত্র দু’টি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে কোভিড-টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। গবেষকদের একটা বড় অংশের মতে, কেন্দ্র যে ১৫ অগস্টের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলছে, তা ভুলে যাওয়াই ভাল।
হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক-এর কোভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হচ্ছে ১২টি কেন্দ্রে ৩৭৫ জনের উপরে। এর মধ্যে ১০০ জনের উপরে টিকা প্রয়োগ হবে দিল্লির এমসেও। খুব দ্রুত হলে এমস আগামী বৃহস্পতিবার মানবদেহে প্রথম টিকা প্রয়োগ করবে। সংস্থার বক্তব্য, সব নিয়ম মেনে এগোলে এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুর আগে কোনও ভাবেই টিকা বাজারে আনা সম্ভব নয়। এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, ‘‘ওই ৩৭৫ জনের মধ্যে ১০০ জনের উপরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে আমাদের হাসপাতালে।’’ ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের জন্য ১৮০০ জন আবেদন করেছেন বলে জানান ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মেডিসিন-এর চিকিৎসক সঞ্জয় রাই। তাঁর কথায়, ‘‘এথিক্স কমিটি ছাড়পত্র দেওয়ার পরেই স্বেচ্ছাসেবকদের স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে। সুস্থ ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে প্রথম পর্বে লাগবে। চেষ্টা চলছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে টিকা প্রয়োগ শুরু করার। না-হলে শুক্রবার অবশ্যই।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিল্লি ছাড়াও, দক্ষিণের রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ থেকেও স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু যে হেতু বিষয়টির সঙ্গে নজরদারি-প্রক্রিয়া যুক্ত, তাই দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার ব্যক্তিদেরই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম পর্বে ১৮-৫৫ বছর বয়সিদের উপরে টিকা প্রয়োগ হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১২-৬৫ বছর বয়সিদের উপর। প্রথম ধাপে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়ার পরে দু’ঘণ্টা হাসপাতালে নজরদারিতে রাখা হবে। দেখা হবে, কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি না। সব ঠিক থাকলে দু’ঘণ্টা পরে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পাবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে হবে হাসপাতালে।
বায়োটেক-এর টিকা এখনও অপরীক্ষিত। যদি স্বেচ্ছাসেবকদের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে? সঞ্জয় বলেন, ‘‘তা হলে দ্রুত সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হবে। এর জন্য প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবীর বিমা করানো হবে।’’ কত দিন সময় লাগবে সে প্রসঙ্গে সঞ্জয় বলেন, ‘‘প্রথম পর্বে শূন্য ও চোদ্দ দিনের মাথায় টিকা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে চার সপ্তাহ ধরে দেখা হবে ওই ব্যক্তি সুস্থ রয়েছেন কি না। সকলে সুস্থ থাকলে, দ্বিতীয় পর্বে যাওয়া হবে।’’ সে ক্ষেত্রে সুস্থতার সঙ্গে দেখা হবে শরীরে ওই টিকার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কি না। এতেই প্রায় চার মাস সময় লাগবে বলে মত সঞ্জয়ের। এর পর তৃতীয় ধাপ। সেখানে প্রায় হাজার জনের পরীক্ষা হবে। তাতেও দু’মাসের বেশি সময় লাগবে। ডিরেক্টর গুলেরিয়ার কথায়, ‘‘নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও সমঝোতা করবে না এমস।’’ ফলে চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুর আগে টিকা বাজারে আনা সম্ভব হবে না। তা হলে ১৫ অগস্টের সময়সীমা? হেসে উত্তর এড়ালেন সঞ্জয়।