BHU

অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে সমাজ, বিএইচইউ-এ সংস্কৃত শিক্ষকের নিয়োগ ঘিরে প্রশ্ন কি তিনি মুসলিম বলেই?

এই ঘটনাপ্রবাহই প্রমাণ করে, এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের মুখোমুখি আমরা। ফিরোজ সংস্কৃতে পিএইচডি পেয়েছেন ২০১৮ সালে। এ বছরই ১৪ অগস্ট  রাজস্থান সরকার তাঁকে সংস্কৃত যুব প্রতিভা পুরস্কার দিয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫৯
Share:

সংস্কৃত শিক্ষক ফিরোজ খান।

সমাজটা ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে তা আয়নার মতো তুলে ধরল বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ফিরোজ খানের নিয়োগ সংক্রান্ত ঝামেলা। সংস্কৃতে নিজের ব্যুৎপত্তি রীতিমতো প্রমাণ করেছেন ফিরোজ। তিন পুরুষ ধরে তাঁর পরিবারে সংস্কৃতের চর্চা। তবু তাঁকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বারবার জানিয়ে দিলেন, গুরুকুলে অহিন্দু অধ্যাপক নিয়োগ তাঁরা কিছুতেই সমর্থন করছেন না।

Advertisement

এই ঘটনাপ্রবাহই প্রমাণ করে, এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের মুখোমুখি আমরা। ফিরোজ সংস্কৃতে পিএইচডি পেয়েছেন ২০১৮ সালে। এ বছরই ১৪ অগস্ট রাজস্থান সরকার তাঁকে সংস্কৃত যুব প্রতিভা পুরস্কার দিয়েছে। ফিরোজের নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা চলাকালে উপাচার্য স্পষ্টই বলেছেন, সিলেকশন কমিটি ইউজিসির সমস্ত নিয়ম মেনেই তাঁকে নিয়োগ করেছে। তবু মানতে চাননি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা।


তাঁরা (এবিভিপির ছাত্ররা‌‌‌‌‌) যুক্তি দিচ্ছেন, এই নিয়োগকে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যও সমর্থন করতেন না। অনিয়মের অভিযোগও আনছেন তাঁরা। ফিরোজ পারিবারিক ভাবেই এই ভাষাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্লাস টু থেকে সে সংস্কৃত বিদ্যালয়ে পড়েছে। কাজেই নানা মহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, ফিরোজের ধর্মপরিচয়ের কারণেই কি তাঁকে যোগ্যতা প্রমাণের পরেও আরও পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করানো? ফিরোজ হয়তো শিগগিরই অধ্যাপনা জীবন শুরু করবেন, কিন্তু এই অসূয়ার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে তিনি পারবেন তো?

Advertisement

আরও পড়ুন: হাতে ড্রোন, বিদেশি অস্ত্র, ক্ষত সারিয়ে মাওবাদীরা বড় হামলায় তৈরি, বলছে গোয়েন্দা রিপোর্ট

অথচ আমাদের অতীতটা এমন ছিল না। সংস্কৃত ভাষাকে ঘিরে থাকা ক্ষমতার রাজনীতি মুঘল আমলেই ফিকে হয়ে যায়। বেনারসের সংস্কৃত পণ্ডিতরা নিয়মিত মুঘল দরবারে যেতেন। সংস্কৃতে ব্রাহ্মণের এই একচেটিয়াকরণ আরও ভেঙে যায় ব্রিটিশ আমলে। ব্রাহ্মণরাই অর্থ-যশের কারণে ‘ম্লেচ্ছ’ ব্রিটিশদের সংস্কৃত জগতে প্রবেশের অধিকার দেন। ব্রিটিশ আমলে মোট তিনটি সংস্কৃত কলেজ খোলা হয়। বেনারসে কলেজ স্থাপিত হয় ১৭৯১ সালে, পুনায় ১৮২১ সালে, কলকাতায় ১৮২৪ সালে। ১৮৩২ সালে সংস্কৃত কলেজে ঈশ্বরচন্দ্রের নিয়োগ নিয়েও ধুন্ধুমার বেধেছিল। প্রতিবাদী ব্রাক্ষ্মণ অধ্যাপকদের যুক্তি ছিল, বিদ্যাসাগর শূদ্রদের নানা সংস্কার শিখিয়েছেন, তিনি অচ্ছুত। ব্রিটিশ প্রশাসকরা সাফ জানিয়ে দেন, এই নিয়োগ নিয়ে যার অসুবিধে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।

আরও পড়ুন: শুধু বিজেপি নয়, মমতার নিশানায় এ বার এমআইএম-ও, ‘মিরজাফরদের’ তাড়িয়ে ঐক্যের নির্দেশ দলকে​

কিন্তু সেই অতীতের ছবিটা আজ অনেকটাই যেন ম্লান। আজ ‘ধর্ম’ শিক্ষক নিয়োগে সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই সময়ে আমাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করতে হয়, আমরা এগোচ্ছি না পিছোচ্ছি। ফিরোজ কিন্তু অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। প্রবল অসূয়ার মুখেও তাঁর মুখে আত্মবিশ্বাস, “আমি পড়াতে পারলে ওরা আমায় পছন্দ করবেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement