Consumption of Fish in India

এক দশকে মাছ খাওয়ার হার বেড়ে দ্বিগুণ! মাছে-ভাতে বাঙালি, এই প্রবাদ সত্য এখন গোটা দেশে

কেন্দ্রীয় সরকারের মৎস্য দফতর ২০২২-এর রিপোর্টে জানিয়েছিল, এ দেশে সবথেকে বেশি মাছ খান লক্ষদ্বীপের মানুষ। বছরে মাথাপিছু ১২৫ কেজি। রাজ্যগুলির মধ্যে গোয়ার মানুষ সবথেকে বেশি মাছ খান।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাজারে গিয়ে শুধু রুই বা কাতলা মিললে মাছ খাওয়া হয় ঠিকই। তবে তা সে রোজকার মাছের ঝোল-ভাতের রুটিনমাফিক খাওয়া। রুই-কাতলার সঙ্গে ইলিশ, তোপসে, চিতল, কই, পাবদার মতো হরেক রকমের মাছ যদি মেলে, তবে মাছ খাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। মাছে-ভাতে বেঁচে থাকা বাঙালির কাছে কোনও নতুন খবর নয়। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশেই এই প্রবাদ সত্য।

Advertisement

আর্থিক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ (এনসিএইআর)-এর সমীক্ষা বলছে, দশ বছরে দেশের মানুষের মাছ খাওয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন একজন ব্যক্তি বছরে ১৩ কেজিরও বেশি মাছ খাচ্ছেন। ২০১১-১২তে সরকারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, বছরে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ মাত্র ৭ কেজি। ২০২২-২৩-এ এনসিএইআর-এর সমীক্ষায় তা বেড়ে ১৩ কেজির উপরে চলে গিয়েছে। সমীক্ষায় ৫৬ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, বাজারে নানা রকম মাছ মিললে মাছ খাওয়ার
পরিমাণ বেড়ে যায়। মাত্র ১৯ শতাংশ পরিবার জানিয়েছেন, মাছের দাম কম হলে মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে।

মাছ খাওয়ার সঙ্গেই বেড়েছে মাছ কেনার পিছনে খরচও। দশ বছর আগে কোনও পরিবার হাজার টাকার বাজার করলে তার মধ্যে মাত্র ৭৬ টাকা মাছের পিছনে খরচ হত। এখন হাজার টাকার বাজার হলে তার মধ্যে ১৬৮ টাকা মাছের পিছনে খরচ হচ্ছে। সে সময় একটি পরিবার মাসে গড়ে ২.৬৬ কেজি মাছ খেত। এখন তা প্রায় ৫ কেজিতে পৌঁছে গিয়েছে। সমীক্ষায় ২৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের মাছ খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বাড়িতে মাছ রান্না করার চল এবং মাছের মধ্যে দিয়ে আহারের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করার তাগিদই এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

তবে এনসিএইআর-এর গবেষকরা বলছেন, গত দশ বছরে মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়লেও আন্তর্জাতিক মাপকাঠির তুলনায় ভারতে মাছ খাওয়ার পরিমাণ এখনও কমই। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা এফএও (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন) এবং ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)-এর অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে মাথাপিছু ২০.৫ কেজি মাছ খাওয়া হয়। ২০৩১-এ তা ২১.৪ কেজিতে চলে যাবে। আর্থিক বৃদ্ধি, মানুষের আয় বাড়লে মৎস্য ভক্ষণের পরিমাণও বাড়বে।

এনসিএইআর-এর তিন গবেষক সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মী জোশী ও নিজরা ডেকা লক্ষ করেছেন, বড়লোক বা ধনীদের একটা অংশ মাছের রক্ত, আঁশ, জল পেরিয়ে মাছের বাজারে যেতে পছন্দ করেন না। উচ্চ আয়সম্পন্ন গোষ্ঠীর ৫৪ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, ওই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য তাঁরা মাছের বাজার এড়িয়ে চলেন। মধ্যবিত্তদের একাংশ আবার মাছ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি অবহিত নন। নিম্নবিত্ত মানুষের অনেকে কেনার ক্ষমতা নেই বলে মাছ কম খাচ্ছেন। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, হরিয়ানার মতো উত্তর ভারতের মতো রাজ্যে আবার মাছ খাওয়ার পরিমাণ এমনিতেই খুব কম।

কেন্দ্রীয় সরকারের মৎস্য দফতর ২০২২-এর রিপোর্টে জানিয়েছিল, এ দেশে সবথেকে বেশি মাছ খান লক্ষদ্বীপের মানুষ। বছরে মাথাপিছু ১২৫ কেজি। রাজ্যগুলির মধ্যে গোয়ার মানুষ সবথেকে বেশি মাছ খান। বছরে মাথাপিছু ৭৮ কেজি। ত্রিপুরা, ওড়িশার মানুষও মাছ খাওয়ায় পিছিয়ে থাকেন না। ওই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ছিল না। তবে তার আগে ২০১৪-র রিপোর্ট জানিয়েছিল, মাছ খাওয়ার প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ লক্ষদ্বীপ, কেরল, গোয়ার পরেই চতুর্থ স্থানে রয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement