কাশ্মীরের কিস্তওয়ারে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত জওয়ান রাকেশ কুমারকে সোমবার শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সেনা বাহিনী। ছবি: পিটিআই।
জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে জঙ্গি কার্যকলাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ১৩ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ জন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছরে জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৪ জন সাধারণ নাগরিকের। তালিকায় রয়েছেন সাত জন তীর্থযাত্রীও। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উপত্যকার যে অঞ্চলগুলিতে খুব বেশি জঙ্গি কার্যকলাপ দেখা যেত না, সেই অঞ্চলগুলিতেও নাশকতার ঘটনা ঘটছে। কাশ্মীরে এত দিন রাজৌরি এবং পুঞ্চে বেশিরভাগ জঙ্গি কার্যকলাপ সীমিত ছিল। বর্তমানে সীমান্তবর্তী এই দুই জেলায় নাশকতা কিছুটা কমেছে। তবে ডোডা, রেইসি, কিস্তওয়ার, কাঠুয়া, উধমপুর এবং জম্মুতে নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে জঙ্গিরা।
রবিবার সকালেও কিস্তওয়ারের জঙ্গলাকীর্ণ চাস এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির লড়াই হয়েছে। সংঘর্ষে এক জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও তিন জন। তার দু’দিন আগেই (শুক্রবার) কিস্তওয়ারে ভিলেজ ডিফেন্স গার্ডের দু’জন কর্মীকে খুন করা হয়েছিল। পর পর এই ঘটনাগুলিকে কেন্দ্র করে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে বাহিনীর।
কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি হওয়ায় জঙ্গি সংগঠনগুলিও নিজেদের ছক বদলে ফেলছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে এখন জঙ্গি সংগঠনে নতুন নিয়োগের জন্য সরাসরি যোগাযোগ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় তাই সরাসরি যোগাযোগের বদলে, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করছে তারা। আধিকারিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানাচ্ছে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস্অ্যাপ, এক্স, টেলিগ্রামের মতো সমাজমাধ্যম ব্যবহার করছে সংগঠনগুলি। পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভুয়ো প্রোফাইল। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন)-ও ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখার ও পার থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা ঘিরেও উদ্বেগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি পিটিআই জানিয়েছিল, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তুলাইল, গুরেজ়, মাচিল এবং গুলমার্গ হয়ে একাধিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে কাশ্মীর উপত্যকায় স্থানীয় তরুণেরা যাতে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে কাশ্মীর পুলিশ এবং ভারতীয় সেনা। তবে কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল ‘সুপ্ত আতঙ্ক’। জঙ্গিরা এক বার অনুপ্রবেশ করলে, প্রথমে তারা সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে থাকে।