‘গডসে ২.০’
সময়টা গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের নিশানা করে গুলি চালিয়েছিল সে। মুখে হিন্দুত্ববাদী স্লোগান আর হাতে বন্দুক ধরা ছেলেটির ছবি ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। হামলাকারীকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছিল, ছেলেটি নাবালক। বয়স মাত্র ১৭ বছর। ফলে তার নাম, পরিচয় ছবি সবই গোপন রাখা হয়। ‘গডসে ২.০’ নামে পরিচিতি পায় হামলাকারী।
তবে মাসখানেকের মধ্যে মিলল জামিনও। এখন জামিনেই মুক্ত ছেলেটি। তবে বাস্তবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভীষণ ভাবে সক্রিয়। প্রকাশ্যে লাগাতার বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা ও উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে ছেলেটিকে গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছেন রাজধানীর সমাজকর্মী সাকেত গোখেল।
গত বছর জামিন মেলার পর থেকে রাজধানী দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের একাধিক জায়গায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী মত প্রচারে এবং উস্কানিমূলক ভাষণ দিতে দেখা গিয়েছে গডসে ২.০ কে। ‘লাভ জেহাদ’, গণপিটুনি, খুন, মহিলাদের অপহরণ, হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তবু পুলিশ সক্রিয় হয়নি। তার সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছে প্রতাপ সারঙ্গীর মতো বিজেপি সাংসদকে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কাছ থেকে ‘শাহিন বাগের যোদ্ধার’ সম্মান পেয়েছে সে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছেলেটি সমান ভাবে সক্রিয়। তার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায় উস্কানিমূলক বক্তৃতার অংশ ও বিদ্বেষমূলক ছবি ও মন্তব্যের ছড়াছড়ি।
তার সাম্প্রতিকতম ভিডিয়োটি মঙ্গলবারের। সে দিন ইনস্টাগ্রাম লাইভে এসে অনুগামীদের নিজের সমর্থনে ভিডিয়ো তৈরির আর্জি জানায় অভিযুক্ত। লাইভে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক স্লোগান দিতেও দেখা যায় তাকে। এ বছর এপ্রিলে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে অভিযুক্ত বলে, ‘হিন্দুত্বকে রক্ষা করতে তার মতো ১০০ জন যোদ্ধা তৈরি করবে সে।’ গত এপ্রিলেই যন্তরমন্তরে ‘হিন্দু মহাপঞ্চায়েত’ নামে একটি সভায় উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিতে শোনা গিয়েছিল তাকে। জামিয়ায় গুলি চালনার ঘটনায় ধৃত (বর্তমানে জামিনে মুক্ত) আর এক বন্দুকবাজ কপিল গুর্জরও ওই সভায় ছিল। ৪ জুলাই রামলীলা ময়দানে পটৌডি মহাপঞ্চায়েতে বক্তৃতা দেয় দু’জনে। ওই সভায় তার ধর্মবিদ্বেষী, হিংসাত্মক এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। দিল্লি পুলিশ যদিও ‘আপত্তিকর’ কিছু দেখতে পায়নি এখনও।
মঙ্গলবার সমাজকর্মী সাকেত গোখেল দিল্লি পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে যেন নাবালক হিসেবে বিবেচনা করা না হয়। কারণ একটি ভিডিয়োয় অভিযুক্ত নিজেই দাবি করেছে, আর সে নাবালক নয়। দাবি, এখন তার বয়স উনিশ বছর। পটৌডি মহাপঞ্চায়েতে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার জন্য তার জামিন খারিজের আবেদন জানান গোখেল। পাশাপাশি গুরুগ্রামের একটি থানায় তাকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন ওই সমাজকর্মী।