এ দেশের সিলিকন ভ্যালিতে আজ প্রায় এক দশকের বেশি সময় রয়েছি। বহু সুযোগ-সুবিধা থাকলেও কয়েকটি কারণে এই শহর বিশ্বায়িত হতে পারছে না। সব চেয়ে বড় কারণ, পানীয় জলের অভাব। তা ছাড়া বেহাল পরিবহণ ব্যবস্থা ও সাফাই কাজ।
বেঙ্গালুরু শহরটা কিন্তু একেবারেই অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হয়নি। বিজয়নগরের রাজা কেম্পে গৌড়া ও প্রযুক্তিবিদ বিশ্বেশ্বরাইয়ার হাতে তৈরি। পুরনো শহরটি বেশ সুন্দর ছিল। এখনও সুন্দর আছে। যেহেতু এখানে কোনও বড় নদী নেই কাছে, তাই অনেক দিঘি (যাকে এখানে ট্যাঙ্ক বলা হয়), মাটি কেটে বৃষ্টির জল ধরার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের কথা, সিলিকন ভ্যালিতে যখন প্রবল বৃদ্ধি ঘটল, বলা যায় জনবিস্ফোরণ হল, তখন এই দিঘি-হ্রদগুলোকে বুজিয়ে ফেলা হল। কারণ অবশ্যই, বেআইনি জমি-বাড়ি ব্যবসা। এতে সরকার এবং আমলাদের যথেষ্ট সাহায্য ছিল বলেই শোনা যায়। এ অভিযোগও আছে, সেটার জন্য প্রভূত অর্থের আদানপ্রদান হয়েছিল।
এ তো গেল কী হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বৃহত্তর বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। জল ছাড়া চলবে কী করে?
এর জন্য আছে ‘ট্যাঙ্কার মাফিয়া’! বেঙ্গালুরুর আশপাশের সমস্ত গ্রামে গভীর গর্ত করে সেই জল তোলা হয়। এই পাথুরে জমিতে সহজে জল পাওয়া যায় না। গর্ত করতে হয় কয়েকশো ফুট। সেই জল চড়া দামে বিক্রি হয় শহরে। কিছু দিন আগেও এক ট্যাঙ্কার জল ছিল এক হাজার টাকা। এখন সেটা প্রায় দ্বিগুণ। সরকার কি কিছুই করেনি? সেটা হয়তো সত্যি নয়। কাবেরী নদীর জল বহু জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, সেই জল নিয়ে তামিলনাড়ুর সঙ্গে প্রায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত হতে যাচ্ছিল। তা ছাড়া বেঙ্গালুরু থেকে মহীশূর যাওয়ার পথে প্রচুর পরিমাণে আখের জমি ও চিনিকল দেখা যায়। সেই সব জায়গায় জলের জোগান দেয় কাবেরী। ফলস্বরূপ বেঙ্গালুরুতে যা ছিল, তা-ই রইল। মাঝখান থেকে আশপাশের গ্রামগুলির জলস্তর নেমে গিয়ে প্রায় খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শহরের মধ্যে গভীর নলকূপ খনন তাই বেআইনি। কিন্তু তারই ফাঁক গলে পাড়ার দাদারা সে সব খুঁড়িয়ে নেয়। তখন
আবার আস্তে আস্তে আশপাশের বাড়িগুলির অগভীর নলকূপ শুকিয়ে যায়। তখন সেই বাড়ির বাসিন্দারা বাধ্য হন, পাড়ার দাদাদের থেকে পয়সা দিয়ে জল কিনতে।
কিছু দিন আগেই ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স ব্যাঙ্গালোর’ (আইআইএসসি) সতর্কবার্তা দিয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে এ শহর বাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। সরকার তাই আগামী ৫ বছরে সব বাড়ি তৈরির প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। বৃষ্টির জল ধরাও এখন বাধ্যতামূলক। তাতে আদৌ কোনও ফল হবে কি না, সেটা আরও এক-দু’বছরে বোঝা যাবে।
(লেখক প্রযুক্তিবিদ)