নির্ভয়াকাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসি দিতে চান তামিলনাড়ুর পুলিশকর্মী এস সুভাষ শ্রীনিবাসন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
নির্ভয়াকাণ্ডের চার সাজাপ্রাপ্তের প্রাণদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসুড়ে খুঁজছে তিহাড় জেল। এর মধ্যেই ওই চার অপরাধীকে ফাঁসি দিতে চেয়ে নিজেই জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখলেন তামিলনাড়ুর এক পুলিশকর্মী।
বক্সার জেল থেকে আনা হয়েছে ফাঁসির দড়ি। কয়েক প্রস্থ মহড়াও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ফাঁসুড়ে অমিল। এই খবর পেয়ে ওই চার অপরাধীকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য নিজেই এগিয়ে এসেছেন তামিলনাড়ু পুলিশের হেড কনস্টেবল এস সুভাষ শ্রীনিবাসন। এই বিষয়ে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে গত ৬ ডিসেম্বর চিঠিও লিখেছেন তিনি। কেন এই কাজে এগিয়ে এলেন? প্রশ্নের জবাবে শ্রীনিবাসন বলছেন, ‘‘আমি খবরে জানতে পারলাম, নির্ভয়া-কাণ্ডের সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য কোনও ফাঁসুড়ে মিলছে না। তারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। তাই তাদের সাজা কার্যকর করতে দেরি হওয়া উচিত নয়।’’ তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম জেলায় সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত এই পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘আমি আবেদনের সঙ্গে আমার ফোন নম্বরও দিয়েছি। তবে এখনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।’’
শ্রীনিবাসনের দাদু ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আইএনএ ফৌজে। বাহিনীতে সাহসী বলে পরিচিত শ্রীনিবাসন। ১৯৯৭ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পুলিশের পেশায় আসার পর বার বার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। কয়েক বছর আগে, এক বার প্রাণ বাজি রেখে কুয়োয় আটকে পড়া এক শিশু ও তার আত্মীয়কে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। সে দিনের কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। এ জন্য তামিলনাড়ু সরকারের তরফে সাহসিকতার পুরস্কারও পান তিনি। এ বার নির্ভয়া কাণ্ডের সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসিতে ঝোলাতে চান তিনি। জেল কর্তৃপক্ষ যাতে তাঁর আবেদন স্বীকার করেন, সে জন্য ইতিমধ্যেই ইষ্টদেবতার কাছে মানত করেও রেখেছেন বলে জানিয়েছেন শ্রীনিবাসন।
আরও পড়ুন: মুসলিম হব, বলছেন প্রাক্তন আমলারা
হায়দরবাদে তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্তদের পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে। উন্নাওয়ের তরুণীকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর অভিযোগকারিণীকে পুড়িয়ে খুন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুই ঘটনাতেই দেশ জুড়ে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়েছে। আর এই আবহে সাত বছর পরেও এখনও কেন নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসিতে ঝোলানো গেল না, সেই প্রশ্নও উঠছে নানা মহল থেকে। এই মুহূর্তে, নির্ভয়া কাণ্ডের চার দোষী অক্ষয় ঠাকুর, মুকেশ সিংহ, বিনয় কুমার এবং পবন গুপ্ত তিহাড় জেলে বন্দি। তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে জেলে। কিন্তু, তিহাড় জেলের নিজস্ব ফাঁসুড়ে নেই। প্রয়োজনে ভিন রাজ্য থেকেও ফাঁসুড়ে আনা হতে পারে বলে জেল সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: দিল্লির দূষণে এমনিতেই আয়ু কমেছে, ফাঁসি দিয়ে আর লাভ কী: নির্ভয়ার ধর্ষক
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে গভীর রাতে এক তরুণীকে চলন্ত বাসে তুলে ছ’জন মিলে গণধর্ষণ করেন। অকথ্য অত্যাচারও চালানো হয়। ওই ভয়াবহ ঘটনার পর দেশ জুড়ে তীব্র আলোড়ন পড়ে যায়। ঘটনায় জড়িত ছ’জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল নিম্ন আদালত। তাঁদের মধ্যে এক জন ঘটনার সময় নাবালক থাকায় সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু ৫ জনকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। এঁদের মধ্যে রাম সিংহ নামে এক অভিযুক্ত তিহাড় জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করেন