পুলিশের জালে অভিযুক্ত দর্জি ৩৮ বছরের সুনীল রাস্তোগি। ছবি: সংগৃহীত।
পেশায় দর্জি। কিন্তু, ‘শিকার’ ধরার জন্য বসে থাকত বাচ্চাদের স্কুলের আশপাশে। নিজেই স্বীকার করেছে, ৭-১০ বয়সী নাবালিকাদের ‘শিকার’ করত সে। স্কুল থেকে ফেরার পথে ওই বয়সের কোনও নাবালিকাকে একলা পেলেই তাকে ভুলিয়েভালিয়ে নিয়ে যেত নির্জন জায়গায়। এর পর তার লালসার শিকার হতে হত ওই নাবালিকাকে। এ ভাবেই চলছিল প্রায় চোদ্দো বছর। অবশেষে পুলিশের জালে পড়েছে সেই দর্জি। ৩৮ বছরের সুনীল রাস্তোগি। গত শনিবার যৌন নির্যাতনের অভিযোগে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সুনীলকে। পাঁচ সন্তানের বাবা সুনীলের কুকীর্তির বিবরণ শুনে হতবাক পুলিশের তাবড় কর্তা। এত দিন ধরে কুকর্ম চালিয়েও কী ভাবে পুলিশের জাল এড়িয়ে গেল সে, তা ভেবেই অবাক তাঁরা।
গত চোদ্দো বছরে তার লালসার শিকার হয়েছে দিল্লির আশপাশের আড়াই হাজারেরও বেশি নাবালিকা। তা-ও ধরা পড়েনি সুনীল। তবে গত ডিসেম্বর থেকে তিনটি যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশের কাছে সুনীলের নামই উঠে আসে। আদতে উত্তরপ্রদেশের রামপুরের বাসিন্দা সুনীল রুজিরোজগারের টানে ১৯৯০-এ পরিবার নিয়ে দিল্লিতে চলে আসে। এর পর সেখান থেকে যায় উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরে। সেখানেই একটি জামাকাপড় সেলাইয়ের দোকান চালায় সে। বেঁটেখাটো রোগাসোগা সেই সুনীলই যে এত দিন ধরে এলাকায় তার অপরাধের জাল বিছিয়ে রেখেছে তা ভেবেই স্তম্ভিত এলাকাবাসীরা।
আরও পড়ুন
মঞ্চের সামনেই তরুণীর যৌন হেনস্থা, গান থামিয়ে উদ্ধার করলেন আতিফ
গত ১০ জানুয়ারি দু’টি পরিবার পুলিশে অভিযোগ জানায়, তাদের নাবালিকা মেয়েদের অপহরণ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাদের যৌন নির্যাতনেরও চেষ্টা করা হয়। পুলিশ ওই নাবালিকাদের উদ্ধার করার পর জানতে পারে তাদের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল এক ব্যক্তি। তদন্তে নেমে পুলিশকর্মীরা পৌঁছে যান সেই জায়গায়। সেখানেই একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে ওই নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতনের চেষ্টা হয় বলে পুলিশকে জানায় তারা। কিন্তু বাচ্চাদের চিৎকারে পালিয়ে যায় সে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ দেখে, তাতে ধরা পড়েছে সুনীলের ছবি। এর পরই সুনীলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় সুনীল স্বীকার করেছে, একটা-দু’টো নয়, গত চোদ্দো বছর ধরে অসংখ্য নাবালিকার উপর নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছে সে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, গত ২০০৪-এ পূর্ব দিল্লিতে থাকত সে। কিন্তু, সেখানেও তার বিরুদ্ধে পড়শির বাচ্চাদের উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। পড়শিরাই তাকে বেদম পিটিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে।
বছর দু’য়েক পরে উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরে একটি ঘটনায় তার ছ’মাসের জেল হয়। এর পরেও ‘শিকার’-এর খোঁজে দিল্লির আশপাশে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। পুলিশের দাবি, জেরায় সুনীল জানিয়েছে, বাচ্চাদের একলা পেয়ে নানা ছুতোয় তাদের নির্জন জায়গায় নিয়ে যেত সে। সেখানেই তাদের উপর যৌন নিগ্রহ চালাত সে। তিনটি মেয়ে ও দু’টি ছেলের বাবা সুনীলের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। তাদেরও সুনীলের লালসার শিকার হতে হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে তারা।
আরও পড়ুন
চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে, মেরে, পুঁতে মাছ-ভাত খেল ওরা
সুনীলের কাহিনি পুলিশকে মনে করাচ্ছে নিঠারি মামলার কথা। ২০০৬-এ নয়ডার ব্যবসায়ী মনিন্দর সিংহ পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হতে থাকে একের পর এক শিশুদের হাড়গোড়-কঙ্কাল। নিঠারি এলাকা থেকে গত দু’বছরে নিখোঁজ হতে থাকে বহু শিশু। ওই ঘটনায় মনিন্দরের সঙ্গে তার পরিচারক সুরিন্দর কোহলিও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের মামলায় ধরা পড়ে। তবে মামলা চলাকালীন বেকসুর খালাস পেয়ে যান মনিন্দর। সুরিন্দরের ফাঁসির আদেশ হলে তা বদলে যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি হয়।