সুইৎজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। জেনিভায় সোমবার। ছবিছ পিটিআই
সে দেশের মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেঁধে সানিয়া মির্জা ও লিয়েন্ডার পেজ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন অনেক বার। এঁদের জুড়ি ভারত ও সুইৎজারল্যান্ডের সম্পর্কের প্রতীক। টেনিস কোর্টের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাফল্য আনতে জুটি বেঁধে এগোবে এই দু’দেশ। জেনিভায় পা দিয়ে আজ এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিশ্চিত দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগসূত্র, মূল্যবোধ এবং দায়বদ্ধতার সংযোগ আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’’
তবে শুধু কূটনৈতিক গালভরা কথাই হয়নি, মোদীর এই সফরে হাতেকলমেও লাভবান হয়েছে নয়াদিল্লি। কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে অন্তত তিনটি বিষয়ে।
• মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর সে দেশের প্রেসিডেন্ট জোহান স্কিনিডার আম্মান ঘোষণা করেছেন, তাঁর দেশ চায়, ভারত পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী (এনএসজি)-র অন্তর্ভূক্ত হোক।
• কালো টাকা ভারতে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে দু’দেশের সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন দুই নেতা।
• ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চালু করা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হবে। সুইৎজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লিকটেনস্টাইন ও নরওয়েকে নিয়ে গড়া এই গোষ্ঠীর সঙ্গে এ সংক্রান্ত আলোচনা ঝুলে আছে সেই ২০০৮ সাল থেকে।
সময়ের দিক থেকে দেখলে এই তিনটির মধ্যে এনএসজি-র বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ৪৮টি দেশের এই গোষ্ঠীর সদস্য হতে গত চার বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। কিন্তু প্রতিবেশী চিন এতে বাগড়া দিয়ে যাচ্ছে।
সমস্যা হল, গোষ্ঠীর সব সদস্যের সম্মতি না মিললে, এর সদস্য হওয়া যায় না। তবু গত ১২ মে ভারত সরকারি ভাবে এনএসজি-র কাছে সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে। আগামি ৯ জুন ভিয়েনায় এবং এর পরে ২৪ জুন সোল অধিবেশনে এনএসজি সদস্যরা এ ব্যাপারে আলোচনা করবে। তার ঠিক আগে এনএসজি-র স্থায়ী সদস্য সুইৎজারল্যান্ডকে পাশে পাওয়াটা ভারতের পক্ষে মূল্যবান বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর চলতি পাঁচ দেশীয় সফরে আজকের গন্তব্য সুইৎজারল্যান্ড ছিল তিন নম্বর দেশ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি আজকের আলোচনায় যে এনএসজি ও কালো টাকার প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পেয়েছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে দু’দেশই। মোদী ও আম্মান আজ বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সুইস প্রেসিডেন্ট গোড়াতেই জানান, ‘‘আমরা ভারতকে কথা দিয়েছি এনএসজি-র সদস্যপদের জন্য তাদের দাবিকে আমরা সমর্থন করব।’’ জবাবে এই সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মোদী।
কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনাটা ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদীর গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে। সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয় নেতা-ব্যবসায়ীদের বিপুল কালো টাকা জমা রয়েছে— এই অভিযোগকে সামনে রেখে বিরোধী থাকার সময় থেকেই সরব হয়েছিল বিজেপি। সরকারে আসার আগেই কালো টাকা ফেরাবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন মোদী। কিন্তু ক্ষমতায় আসার দু’বছর পরেও এ বিষয়ে তেমন এগোতে পারেনি তাঁর সরকার। আজ সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মোদীর কথায়, ‘‘বৈঠকে কালো টাকা এবং কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে যে দু’দেশের মধ্যে আপৎকালীন ভিত্তিতে তথ্য বিনিময় প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আমরা দু’পক্ষই সহমত হয়েছি।’’
তৃতীয় বড় বিষয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। বিশ্বের যত দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য-সম্পর্ক রয়েছে, সুইৎজারল্যান্ড রয়েছে তার পাঁচ নম্বরে। সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ দিনের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সুইস সংস্থাগুলি ভারতের ঘরে ঘরে পরিচিত। এ দেশের অপূর্ব নিসর্গের সঙ্গেও ভারতীয়রা পরিচিত চলচ্চিত্রের দৌলতে। আমরা চাই আপনার আরও বেশি করে ভারতে আসুন। দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোই হবে আমাদের লক্ষ্য।’’ মোদীর পরের গন্তব্য আমেরিকা। সুইৎজারল্যান্ড সফর সেরে মোদী এ দিনই রওনা দেন বারাক ওবামার দেশের উদ্দেশে।