প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি শুভেন্দুর।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়ে আরও এক বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, বাংলার নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্প কার্যকর করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বাংলায়। ১০০ দিনের কাজ থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা তছরুপ হয়েছে বলেও অভিযোগ শুভেন্দুর। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামবদলের অভিযোগও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠিতে তিনি মোদীর কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য রাজ্যের বকেয়া টাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প, করের ভাগ এবং চতুর্দশ অর্থ কমিশনের পারফরম্যান্স গ্র্যান্টের টাকা বাবদ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা পায় রাজ্য। মমতার চিঠি পাঠানোর পরের দিনই, অর্থাৎ শনিবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি লিখলেন, ‘দিনের পর দিন এই দুর্নীতি হয়ে চলেছে। ১০০ দিনের কাজ দিয়ে গরিব মানুষকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। অথচ কোনও কাজ না দিয়েই টাকা খরচ করা হয়েছে। আর তা প্রমাণ করতে ভুল শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে ১০০ দিনের কাজের আওতায় বৃক্ষরোপণের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন শুভেন্দু। লিখেছেন, ‘নথিতে রাজ্য সরকার দেখিয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ ও অন্য চারা গাছ রোপণ করা হয়েছে। আধিকারিকরা যখন পরিদর্শন করতে যান, তখন রাজ্যের তরফে বলা হয় ইয়াস, আমপান এবং অন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চারা গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা গাছগুলিকে দেখিয়ে দাবি করা হয়, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অধীনেই সে সব গাছ রোপণ করা হয়েছে।’ শুভেন্দু অভিযোগ, ‘জয়নগর-২ ব্লক, কুলতলি বিধানসভা কেন্দ্র এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকায় এই ঘটনা হয়েছে।’
এই দুর্নীতির জন্য বাংলার শাসকদল তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন শুভেন্দু। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা এই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে টাঁকশালে পরিণত করেছেন। গরিব চাকরিপ্রার্থীদের হয় টাকা দেওয়া হয়নি, নয় তো জব কার্ড ছিনিয়ে নিয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানীয় নেতারা।’
শুভেন্দু লিখেছেন, ‘অন্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই দুর্নীতি হয়েছে। ইচ্ছাকৃত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। বদলে নিজেদের ইচ্ছামতো নাম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা তদারকি করতে গেলে রাতারাতি সে সব নামের ফলক, সাইনবোর্ড বদলে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবেই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার নাম বদলে করে দেওয়া হয়েছে বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা।’
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য বকেয়া টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মমতার চিঠি পাঠানোর পরের দিনই মোদীকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর চিঠি পাঠানোর মধ্যে যদিও রাজনৈতিক অভিসন্ধিই দেখছে তৃণণূল। দলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা বাংলার ভাল চান না। ন্যায্য পাওনাগণ্ডা আদায়ের জন্য যখন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে দরবার করছেন, তখন বিরোধী দলনেতা বাংলার বরাদ্দ প্রাপ্য আটকানোর চেষ্টা করছেন। এর থেকে বোঝা যায় বাংলা নিয়ে তাঁর এবং তাঁর দলের আন্তরিকতা কতটা!’’