বিজেপি কর্মিসভায় সুষমা স্বরাজ। রবিবার শিলচরে স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
সুস্মিতা দেবের ছোঁড়া বল আজ সোজা কংগ্রেসের ঘরেই চালান করে দিলেন সুষমা স্বরাজ।
নাগরিকত্ব বিতর্কে শিলচরের সাংসদের উদ্দেশে বিদেশমন্ত্রীর আহ্বান— ‘‘এ নিয়ে কংগ্রেস সংসদীয় দলের সঙ্গে কথা বলুন। নাগরিকত্ব বিলে সমর্থনের গ্যারান্টি দিন। আমরা সংসদে তা পেশের জন্য তৈরি রয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দশটির বেশি বিল রাজ্যসভায় পড়ে রয়েছে। কংগ্রেসের অহেতুক বিরোধিতার জন্য সেগুলি আইনে পরিণত করা যাচ্ছে না। লোকসভায় ওরা অধিবেশন চালাতে বাধা দেন, রাজ্যসভায় বিল এলেই বিরোধিতা করেন।’’
তা হলে কি ধর্মীয় নির্যাতনের জেরে ১৯৭১ সালের পরে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন না? শিলচরে দলের কর্মিসভায় এমন প্রশ্ন ওঠার আগেই বিদেশমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন— মোদি সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। কংগ্রেস সমর্থন না করলেও বাংলাদেশ থেকে আসা নির্যাতিত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সিদের বসবাসে যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। একে আইনে পরিণত করা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা অসম বিজেপি সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, ‘‘হিন্দু বাঙালিদের পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।’’ কংগ্রেসের সমালোচনা করে তিনি জানতে চান, ‘‘দেশের মানুষকে ডি ভোটার (সন্দেহভাজন নাগরিক) সাজিয়ে অত্যাচার করছে কার পুলিশ।’’
সুষমা স্বরাজের উপস্থিতির দরুন শিলচরে বিজেপির কর্মিসভা আজ কার্যত জনসভার চেহারা নেয়। দলীয় কর্মসূচি হলেও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ভাষণ শুনতে আগ্রহ ছিল অনেক সাধারণ মানুষের। তাঁদের মূল লক্ষ্য— নাগরিকত্ব আইন, ডি ভোটার, এনআরসি নিয়ে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য শুনবেন।
গত কালই সুষমার দিকে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব। সুষমাদেবী অবশ্য ধরে ধরে তাঁর প্রশ্নের জবাব দিতে যাননি। তবে সুস্মিতাদেবীর নাম উল্লেখ করায় ইঙ্গিত মেলে, প্রশ্নের কথা জানতে পেরেছেন তিনি। কর্মিসভায় মাঠভর্তি লোক দেখে বিদেশমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। সবাইকে নিজেদের এলাকায় ফিরে গিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি দলের বুথভিত্তিক কর্মকর্তাদের কাছে ভোটের আগে প্রতি দিন আধঘণ্টা করে দলকে সময় দিতে বলেন। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দল কী কী করবে, কেন্দ্রে দেড় বছরে কী কী করা হয়েছে, সে সব কথা সবাইকে জানাতে হবে। সুষমা বলেন, ‘‘সব চেয়ে বড় কথা, ভোটের দিন সবাইকে ভোটকেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড় করাতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
নাগরিকত্ব-বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সুষমাকে প্রশ্নবাণ সুস্মিতার
নাগরিকত্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও তিনি ব্রডগেজে শিলচরকে জুড়ে দেওয়া, জন-ধন যোজনা, অটল পেনশন যোজনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের বিশাল জনতার জন্য গুয়াহাটি পর্যন্ত মাত্র একজোড়া ট্রেন চালানো মোটেও যথেষ্ট নয়। সে দিকে তাকিয়ে কলকাতা ও দিল্লির সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।’’
ভাষণের ঠিক আগে কাছাড় জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে শিলচরে একটি পাসপোর্ট সেন্টার চেয়ে সুষমা স্বরাজের হাতে স্মারকপত্র তুলে দেওয়া হয়। বিদেশমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আবেদন মঞ্জুরির কথা ঘোষণা করেন। সঙ্গে দাবি করেন, দক্ষিণ অসমের মানুষ চাইতেই যেমন আঞ্চলিক পাসপোর্ট সেন্টারের অনুমোদন জানিয়েছেন, তেমনি অসমে বিজেপির সরকার গঠনে তাঁরা যেন তাঁর দাবি মেটাতে এগিয়ে আসেন।
কী হবে অসমে সরকার হলে। বিজেপির শীর্ষনেত্রী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার দরুন ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ শেষ হচ্ছে না। অসমে বিজেপি-র সরকার হলে এক বছরে সব সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়। তাঁরা অসম বিকাশ পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছেন। সড়ক পরিবহণের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ২৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে। সর্বানন্দ সোনোয়াল ঘোষণা করেন, বরাকে একটি স্বামী বিবেকানন্দ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। স্বামীজির উপর গবেষণামূলক কাজে সব ধরনের সাহায্য করবে প্রস্তাবিত সেই কেন্দ্র। কাছাড় কাগজ কলের অচলাবস্থার জন্যও সোনোয়াল কংগ্রেসকে দোষারোপ করে জানান, জানুয়ারিতে এই মিলের জন্য তাঁদের সরকার প্যাকেজ ঘোষণা করতে চলেছে।
উল্লেখ্য, লোকসভার সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব দু’বার এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, দু’বারই ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিএম সিদ্ধেশ্বর জানিয়েছেন, কাছাড় কাগজ কল আধুনিকীকরণের কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই।
বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, সম্পাদক মহেন্দ্র সিংহ, সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালের মতো নেতা মঞ্চে থাকলেও, এ দিন সবার নজর কাড়েন অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এই তাঁর প্রথম বরাক সফর। তাই তাঁকে পুরনো কথা টেনে বক্তৃতা করতে হয়। তিনি জানান, কংগ্রেস আমলে বরাক উপত্যকার জন্য কিছু করা হলে তিনিই করেছিলেন। টেট পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকতার চাকরি, মাতৃভাষা মাধ্যমে বিশেষ নিযুক্তি, স্কুল প্রাদেশিকীকরণের উদাহরণ টেনে আনেন। হিমন্তবাবু জানান, এখন টেট শিক্ষকরা বেতন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। স্কুল প্রাদেশিকীকরণ বন্ধ, নিযুক্তি নেই। তিনি আশ্বস্ত করেন, বিজেপির সরকার গঠনের পর তাঁরা টেট শিক্ষকদের চাকরি পাকা করবেন। হবে স্কুল প্রাদেশিকীকরণ। ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ ছ’মাসের মধ্যে শুরু হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন। করিমগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে রাখেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
ডিমা হাসাও জেলা বিজেপির সভাপতি বীরভদ্র হাগজের প্রদীপ জ্বালিয়ে আজ সমাবেশের উদ্বোধন করেন। সভা সঞ্চালনা করেন কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রাই। হাইলাকান্দি জেলা সভাপতি ক্ষিতীশচন্দ্র পাল এবং করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যও সভায় বক্তৃতা করেন। বক্তব্য রাখেন রাজ্য কমিটির সম্পাদক আমিনুল হক লস্করও।