পাঁচ মাস হয়ে গেল খবর নেই সমর টিকাদারের। অশান্ত ইরাকের ঠিক কোথায় রয়েছেন সমর, তা-ও জানেন না তাঁর স্ত্রী নদিয়ার চাপড়ার বাসিন্দা দীপালি। একই অবস্থা নদিয়ার তেহট্টের বাসিন্দা নমিতা সিকদারের। তাঁর স্বামী খোকন সিকদার সম্পর্কেও পাঁচ মাস ধরে কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, জঙ্গি সংগঠন আইএসের কবলে পড়া ৩৯ জন ভারতীয় শ্রমিককে খুন করেছে তারা। শফি ও হাসান নামে দুই বাংলাদেশি এই দাবি করেছেন বলে জানায় এবিপি নিউজ চ্যানেল। তখনই বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে দাবি করা হয়, এই খবরের সত্যতা সম্পর্কে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আশ্বাস দেন, অপহৃত ভারতীয় শ্রমিকরা জীবিত। সে মর্মে কিছু গোপন তথ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ আরও ক’জনকে দেখিয়েছেন সুষমা। তাঁর দাবিতে ভরসা রাখলে উদ্বেগ কমছে না পরিজনদের।
পাঁচ মাস আগে স্রেফ সমান্তরাল কূটনীতির উপর ভিত্তি করে ইরাকে আইএসের হাতে বন্দি ৪৬ জন ভারতীয় নার্সকে সুরক্ষিত ভাবে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন সুষমা। তা দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন নমিতা- দীপালিরা। ভেবেছিলেন, তাঁদের স্বামীরাও ফিরে আসবেন। কিন্তু ফেরা তো দূর অস্ত, তাঁরা ইরাকের কোথায় রয়েছেন তা নিয়েই নিশ্চিত নয় বিদেশ মন্ত্রক। এই অবস্থায় গত কালের রিপোর্ট স্বাভাবিক ভাবেই অপহৃতদের পরিজনদের দুশ্চিন্তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে এ দিন রাজ্যসভা ও লোকসভায় সরব হয় কংগ্রেস।
রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপনেতা আনন্দ শর্মার প্রশ্ন ছিল, ২২ জুন সরকার যে বিবৃতি দিয়েছিল তাতে বলা হয়, অপহৃতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছে। কিন্তু গত কালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই বিবৃতি প্রকাশের সাত দিন আগেই তাদের খুন করেছিল জঙ্গিরা। আনন্দের দাবি, “সরকার দুই কক্ষকেই ভুল তথ্য দিয়েছিল। খবরটা যদি তারা আগে জেনে গিয়ে থাকে, তা হলে অপহৃতদের পরিজনদের কেন মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল?” বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও নিন্দা করেন আনন্দ। লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও অস্পষ্টতার অভিযোগ তুলে বলেন, “সুষমা ভুল তথ্য দিয়েছেন সকলকে। অবিলম্বে পূর্ণ ও স্পষ্ট উত্তর দিক সরকার।” ক্ষোভ জানাতে থাকেন বসপা প্রধান মায়াবতী, জেডিইউ নেতা শরৎ যাদব, তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন, সমাজবাদী পার্টির সদস্য জয়া বচ্চন।
জবাবে সুষমা বলেন, “একটি সূত্রে বিষয়টি দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু অন্তত ছ’টি আলাদা সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, ওঁদের খুন করা হয়নি।” এর পর পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এক জন যে কথা বলছেন সেটায় আপনারা বেশি বিশ্বাস করবেন না কি ছ’জন যে কথা বলছেন তাতে?” তাঁর যুক্তি, শফি ও হাসান নামে যে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে খুনের দাবি করা হয়েছে, তাঁরা স্বচক্ষে ওই হত্যাকাণ্ড দেখেননি। গোটাটাই শুনেছেন আইএসের কবল থেকে পালিয়ে আসা ভারতের নাগরিক হরজিত বাসসির কাছ থেকে। ফলে ওই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই। সুষমার আশ্বাস, যত ক্ষণ না পর্যন্ত ভারতীয় শ্রমিকদের খুনের অকাট্য প্রমাণ মেলে, তত ক্ষণ পর্যন্ত হাল ছাড়বে না বিদেশ মন্ত্রক। এ জন্য সম্প্রতি দু’জন আরবি ভাষায় দক্ষ অফিসারকে কাজে লাগানো হয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে এর থেকে বেশি যে আর কিছু জানানো সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে, সে কথাও বলে দেন সুষমা।
বিদেশমন্ত্রী জানান, তাঁর কাছে এ নিয়ে যে তথ্যপ্রমাণ আছে তা অরুণ জেটলি ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরসিমরৎ কউর বাদলকে দেখিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেগুলি প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয়। আপাতত তাই তাঁর মন্ত্রকের উপরই ভরসা রাখতে আর্জি জানান সুষমা। সে আর্জি মেনেও নিয়েছেন নমিতা। ঘটনাচক্রে হাসানের সঙ্গে এক সময়ে ফোনে কথাও হয়েছিল নমিতার। তাঁর কথায়, “হাসানের সাক্ষাৎকার দেখেছি। কিন্তু বিশ্বাস করছি না। ও আগেও এ রকম বলেছে। সুষমা যখন বলেছেন আমার স্বামী বেঁচে, তখন উনি নিশ্চয়ই জীবিত। উদ্বেগ থাকছেই।”