ভাবমূর্তি ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ মোদীর

দু’দিন আগেও বলা হতো— বিরোধী নেতা মোদী যে কথা বলতেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী তা করেন না। আর এ বারে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি দমনের কাজ করে দেখানোর পর সেই মাত্রাটি ধরে রাখাই মোদীর কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

রাহুল গাঁধী

দু’দিন আগেও বলা হতো— বিরোধী নেতা মোদী যে কথা বলতেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী তা করেন না। আর এ বারে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি দমনের কাজ করে দেখানোর পর সেই মাত্রাটি ধরে রাখাই মোদীর কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

সনিয়া গাঁধীর পর আজ রাহুল গাঁধীও উত্তরপ্রদেশে তাঁর রাজনৈতিক সফরের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীকে ঢালাও তারিফ করতে বাধ্য হলেন। বললেন, ‘‘গত আড়াই বছরে মোদী এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মতো পদক্ষেপ করেছেন। সে জন্য গোটা দেশ তাঁর সঙ্গে আছে।’’ কথায় কথায় মোদীকে তুলোধোনা করা অরবিন্দ কেজরীবালও আজ বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপই করুন, আমরা তাঁর সঙ্গে আছি।’’ যে মায়াবতীর সঙ্গে মোদীকে উত্তরপ্রদেশে লড়তে হচ্ছে, তিনি অবশ্য এ দিনও তাঁকে বিঁধতে ছাড়েননি। সফল অভিযানের জন্য সেনাদের ঢালাও বাহবা দেওয়ার সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পঠানকোট হামলার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল মোদীর। তা হলে হয়তো উরির হামলায় ১৯ সেনার প্রাণ যেত না।’’

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, পাকিস্তান তো চুপ করে বসে থাকবে না। সীমান্তে বিক্ষিপ্ত হামলা যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই দেশের ভিতরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গিরাও নাশকতার চেষ্টা করবে। আর কঠোর হাতে সেই সব হামলার আগাম মোকাবিলা করাই এখন বড় দায়িত্ব। তাঁদের বক্তব্য— না হলে আজ যে বিরোধী নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ‘ধন্য ধন্য’ করছেন, তাঁরাই তখন নিন্দার ঝড় বইয়ে দেবেন। সীমান্তে এবং দেশের ভিতর নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে তৎপর রাখার দায়িত্ব তাই তাঁকেই পালন করতে হবে।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেনা অভিযানের পর দু’টি দিন পেরিয়ে গেলেও, প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলেননি। আজ সকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে স্বচ্ছতা অভিযান নিয়ে সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেও পাকিস্তান নিয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি। কথায় কথায় যে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে টুইট করেন, কাল থেকে আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করেননি। বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘পরশু টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বারে উইকেটে পড়ে থেকে টেস্ট ম্যাচও বার করে নিয়ে আসতে হবে তাঁকে। কারগিলে লড়াই করে, পোখরানে পরমাণু বোমা ফাটিয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ী যে সাহস দেখাতে পারেননি, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি-ঘাঁটি ধ্বংস করে মোদী তা করে দেখিয়েছেন।’’

অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি হঠাৎ তৈরি জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে মোদীর পালে নিয়ে আসার জন্য সাংগঠনিক স্তরে প্রস্তুতি শুরু করেছে। উত্তরপ্রদেশের প্রচারে এখন মোদীর ‘ইচ্ছাশক্তি’কে বড় করে তুলে ধরতে বলা

হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ছায়ামুখ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নির্বাচনী কেন্দ্র লখনউয়ের উৎসবে ‘ইসলামিক সেন্টার অব ইন্ডিয়া’র ব্যানারে সামিল করা হয় সংখ্যালঘুদেরও। জাতীয়তাবাদের উগ্র হাওয়ায় সংখ্যালঘুরা যাতে নিজেদের ‘দলছুট’ মনে না-করে, হামলার আগেই তাদের কাছে টানার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভিও সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় ‘পঞ্চায়েত’ করা শুরু করেছেন। এই সব পুঁজি করে ‘হর হর মোদী’ স্লোগান নিয়ে ভোটে নামতে চান অমিত শাহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement