ধোঁয়াশা: ঝাপসা চারদিক। সোমবার সকালে দিল্লির রাস্তায়। ছবি: পিটিআই।
এ দিকে জাতীয় পরিবেশ আদালত। ও দিকে দিল্লি হাইকোর্ট। আর এক দিকে পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষ। রয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। এ সবের মধ্যে আবার উপরাজ্যপালকে মাঝখানে রেখে অরবিন্দ কেজরীবালের দিল্লি সরকারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের রাজনৈতিক যুদ্ধ!
এই জটের মধ্যেই দিল্লির দূষণ নিয়ে এ বার মাঠে নামল সুপ্রিম কোর্ট।
রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবী রাজ কুমার কপূর। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চ বিষয়টি শুনতে রাজি হন। তাঁর যুক্তি, দিল্লিতে ‘আপৎকালীন পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে। তা কোনও ভাবেই অবহেলা করা যায় না। কপূরের আর্জি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকে রাস্তার ধূলো ও ফসলের গোড়া জ্বালানো বন্ধ করতে নির্দেশ দিক সুপ্রিম কোর্ট। সৌর বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর দিশা দেখাক। এ বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে নোটিস জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজধানীতে প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্ট কি দিল্লির দূষণ নিয়ে জটিলতা কাটাতে পারবে? না কি অধিক সন্ন্যাসীতে আরও গাজন নষ্ট হবে?
আশঙ্কার কারণ হল, ইতিমধ্যেই দিল্লি হাইকোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতে দিল্লির দূষণ নিয়ে মামলা চলছে। তার সঙ্গে চলছে অরবিন্দ কেজরীবাল বনাম মোদী সরকারের যুদ্ধ। বিজেপির অভিযোগ, কেজরীবাল নিজের ব্যর্থতার দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপান। কেজরীবালের পাল্টা অভিযোগ, দিল্লির মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয়নি বলে তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
কেজরীবালের যুক্তি, তিনি দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে পদক্ষেপই করেন, উপরাজ্যপাল তা আটকে রাখেন। কেন্দ্র বলে, আসল ক্ষমতা উপরাজ্যপালের। তাঁকে যদি ক্ষমতাই না দেওয়া হয়, তা হলে তিনি সমালোচনা শুনবেন কেন?
কেজরী-সরকারের অভিযোগ, আইনের ঝকমারিতে গত ৭ বছর ধরে নতুন বাস কেনা যায়নি। সেই আইন পাল্টাতে গেলে উপরাজ্যপাল বাধা দেন। দিল্লিতে এখন ৫,৫০০ বাস রয়েছে। দরকার নতুন ১১ হাজার বাস। দিল্লির মেট্রোয় রোজ ২৮ লক্ষ যাত্রী চাপেন। সেই মেট্রোর ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। কেজরীবাল তার বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, দিল্লি সরকারকেই মেট্রো চালাতে দেওয়া হোক। দিল্লিতে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করতে কেজরীবাল শহরের বাইরে ট্রাক টার্মিনাল তৈরি করতে চান। তা হলে যানজট কমবে। রাস্তার ধূলো থেকেও দূষণ বন্ধ হবে। তাতেও আপত্তি তুলেছেন উপরাজ্যপাল।
এখন সব নজর সুপ্রিম কোর্টের দিকেই। রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছিল তাদের হাত ধরেই। সিএনজি চালিত বাণিজ্যিক গাড়ি চালু থেকে পরিবেশবিদ ভুরে লালের নেতৃত্বে পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষ— সবই তাদের নির্দেশে। এ বারও ভরসা তারাই।