বিচারপতি বিভি নাগরত্ন।
দেশের কোনও কোনও রাজ্যপাল তাঁদের প্রার্থিত ভূমিকা পালন করছেন না বলে মত প্রকাশ করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন। গত কাল বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় বিচারপতি বলেন, ‘‘কোনও কোনও রাজ্যপাল এমন জায়গায় সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন, যেখানে তা দেখানো উচিত নয়। আর যেখানে সক্রিয় হওয়া উচিত, সেখানে নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন।’’ শীর্ষ আদালতে রাজ্যপালদের ঘিরে যে সব মামলা আসছে, সেগুলিও ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘হোম ইন দ্য নেশন: ইন্ডিয়ান উইমেন্স কনস্টিটিউশনাল ইমাজিনারিজ়’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিচারপতি নাগরত্ন রাজ্যপালদের ভূমিকার কথা তোলেন। তাঁর মন্তব্যকে আলাদা করে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ সম্প্রতি কেরল এবং তামিলনাড়ু সরকার তাদের রাজ্যপালের ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সু্প্রিম কোর্টে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদ রাজ্যপালকে ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে যে রক্ষাকবচ দেয়, তা পরীক্ষা করে দেখতে সম্মত হয়েছে শীর্ষ আদালত। আবার যে বেঙ্গালুরুতে দাঁড়িয়ে বিচারপতি কথা বলছিলেন, সেই রাজ্য কর্নাটকেও সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাত বেধেছে। একটি জমি দুর্নীতির মামলায় নাম জড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী পার্বতীর। রাজ্যপাল নিজে সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে শো-কজ় নোটিস পাঠিয়েছেন। রাজ্য সরকার প্রস্তাব গ্রহণ করে বলেছে, রাজ্যপালকে ওই নোটিস প্রত্যাহার করতে হবে। অন্য দিকে, কেরল এবং তামিলনাড়ু সরকারের অভিযোগ, তাদের রাজ্যপালেরা বিল সই করছেন না। এই প্রেক্ষিতেই বিচারপতি বলেছেন, ‘‘আজকের দিনে দুর্ভাগ্যজনক হল ভারতে কোনও কোনও রাজ্যপাল এমন একটা ভূমিকা নিচ্ছেন, যা তাঁদের নেওয়া উচিত নয়। আর এমন এমন জায়গায় নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন, যেটাও উচিত নয়। সু্প্রিম কোর্টে রাজ্যপালদের নিয়ে যে সব মামলা আসছে, সেগুলোরাজ্যপালের সাংবিধানিক অবস্থানের নিরিখে দুঃখজনক।’’
এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথাও তোলেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয়তা, ভ্রাতৃত্ব, মৌলিক অধিকার এবং নীতিনিষ্ঠ প্রশাসনই’ হওয়া উচিত জাতির অগ্রাধিকার। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের চলতি আবহে তিনি মনে করিয়ে দেন, রাজ্য সরকারকে ‘অদক্ষ বা অধীনস্থ’ ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলির গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয় এবং সে ব্যাপারে রাজ্যকে অদক্ষ বা অধীনস্থ বলে মনে করা ঠিক নয়।’’ দলাদলি নয়, সাংবিধানিক রাষ্ট্রনীতিই প্রশাসনের মন্ত্র হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০২৭ সালে বিচারপতি নাগরত্নের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে আসীনহওয়ার কথা।