Shaheen Bagh

অনির্দিষ্ট কাল রাস্তা আটকে রাখার বিরুদ্ধেই আদালত

শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের রাস্তা অবরোধ নিয়েও আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৪
Share:

ছবি: এএফপি।

শাহিন বাগের আন্দোলনের মধ্যেই শিশু মহম্মদ জহানের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে। তাঁর জিজ্ঞাস্য, ‘‘একটা শিশু মারা গিয়েছে! চার মাসের একটা শিশু কি প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল?’’

Advertisement

কিন্তু শাহিন বাগের শিশুদের স্কুলে ‘পাকিস্তানি, জঙ্গি, গদ্দার’ বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও তা শুনতে রাজি হলেন না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অবস্থান, দেশের শীর্ষ আদালত মাতৃত্বকে সম্মান করে। সমাজের শান্তিকেও মর্যাদা দেয়। কিন্তু ‘অপরাধবোধ তৈরি’-র জন্য কোনও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ যুক্তি শুনতে রাজি নয়।

চার মাসের মহম্মদ জহানকে কোলে নিয়েই তার মা নাজিয়া রোজ শাহিন বাগের আন্দোলনে শামিল হতেন। ঠান্ডায় শিশুটির মৃত্যু হয়। প্রতিবাদ-আন্দোলনে শিশুদের শামিল করানোটা তাদের উপরে অত্যাচার বলে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছিল এ বছর সাহসিকতার জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া মুম্বইয়ের স্কুল ছাত্রী জেন সদাবর্তে। তার ভিত্তিতেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনায় মামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

Advertisement

আরও পড়ুন: পুলিশের হেনস্থা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব সাংবাদিকেরাও

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, শিশুমৃত্যু ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু শাহিন বাগের মহিলাদের হয়ে আইনজীবী শাহরুখ আলম অভিযোগ তোলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের প্রাণ রক্ষা করা এমনিতেই কঠিন। এই সব শিশুরা ঝুড়িতে থাকে। মাথার উপর হয়তো শুধুই প্লাস্টিকের চাদর। লোকে ঘর বলতে যেমনটা ভাবে, তেমন নয়। শাহিন বাগের মায়েদের কথা তা-ই শুনতে হবে। স্কুলে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাকিস্তানি, জঙ্গি, গদ্দার বলা হচ্ছে!’’

শোনা মাত্র চটে যান প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘‘আমরা কাউকে আদালতের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে আরও সমস্যা তৈরি করতে দেব না। কাউকে স্কুলে পাকিস্তানি বলা হলে তা জানানোর মঞ্চ এটা নয়। আমরা এখানে সিএএ, এনআরসি, স্কুলে খারাপ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে বসিনি। আমরা একটি নির্দিষ্ট শিশুর মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা মাতৃত্বকে সম্মান করি। তাই অপরাধবোধ তৈরির জন্য যুক্তি খাড়া করবেন না।’’ শাহিন বাগের মহিলাদের হয়ে আর এক আইনজীবী যুক্তি দেন, ‘‘শিশুদেরও প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। তা আটকাবেন না।’’ তা শুনে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন ছোড়েন, ‘‘একটা চার মাসের শিশু ওখানে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল? আপনি কি বলছেন! চার মাসের শিশু প্রতিবাদ করতে পারে?’’ আজ প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জবাব চেয়ে নোটিস জারি করেছেন। শাহিন বাগের মহিলাদের কথাও শুনতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু কোনও অপ্রাসঙ্গিক কথা শোনা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের রাস্তা অবরোধ নিয়েও আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে। রাস্তা অবরোধে আপত্তি তুলে এক জোড়া মামলা হয়েছিল। দাবি ছিল, মানুষের সমস্যার সমাধানে রাস্তা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হোক। সুপ্রিম কোর্ট এখনই কোনও নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউল তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করেছেন, ‘‘অনির্দিষ্ট কালের জন্য রাস্তা বন্ধ করে রাখা যায় না। সবাই সর্বত্র প্রতিবাদ করতে শুরু করলে কী করে হবে? নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় প্রতিবাদ করা যেতে পারে।’’ আর এক বিচারপতি কে এম জোসেফ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘একটা জাতীয় সড়ক কি বন্ধ করে রাখা যায়?’’

মামলাকারীদের দাবি ছিল, রাস্তা আটকে অবরোধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করা হোক। আজ বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউলের বেঞ্চ এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লি পুলিশ ও দিল্লি সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি তাদের বক্তব্য শোনা হবে।

শাহিন বাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা শাহিন কওসর বলেন, ‘‘১৭ তারিখের শুনানির দিকে তাকিয়ে রয়েছি। এই যে আমাদের এত দিন টানা রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে, তার দায় সরকারের নয় কি?’’ আর এক প্রতিবাদকারীর বক্তব্য, ‘‘রাস্তা ছেড়ে উঠে যেতে আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার বলুক, কোথায় আন্দোলন করার অনুমতি দেবে তারা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement