Godhra

গোধরায় ট্রেনে আগুন লাগিয়ে খুনের ঘটনায় ৮ জন সাজাপ্রাপ্তকে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে সম্মতি দিয়েছিল গুজরাত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে গোধরাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের জামিনের বিরোধিতা করেন গুজরাত সরকারের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৫৬
Share:

গুজরাত সরকারের আপত্তি খারিজ করে গোধরাকাণ্ডের ৮ দোষীকে জামিন শীর্ষ আদালতের।

গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৮ জনের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ গোধরাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ওই দোষীদের শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়ার জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

ওই ৮ জন গত ১৭ বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। কিন্তু জেলে আচরণগত কারণে আরও ৪ জন সাজাপ্রাপ্তের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে গোধরাকাণ্ডের আর এক দোষী, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফারুকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

শীর্ষ আদালতে ওই আট দোষীর জামিনের বিরোধিতা করেন গুজরাত সরকারের আইনজীবী তথা দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর যুক্তি ছিল, মহিলা, শিশু-সহ ৫৯ জনকে পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য অপরাধে জড়িতদের মুক্তির প্রয়োজন নেই। মেহতা বলেন, ‘‘গোধরায় নিছক ট্রেনে আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটেনি। ওই হত্যাকাণ্ডের দোষীরা পরিকল্পিত ভাবে সাবরমতী এক্সপ্রেসের এস-৬ কামরার দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে খুনের উদ্দেশ্যে আগুন ধরিয়েছিল।’’ অন্য দিকে, আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী জানান, গুজরাত হাই কোর্টের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিযুক্তদের অনেকেই শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। সেই আবেদনগুলি এখনও বিচারাধীন। কিন্তু তাঁরা ১৭ বছর ধরে টানা জেলবন্দি রয়েছেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০০২-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসে করসেবকদের পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটে। ট্রেনের এস-৬ কোচের অগ্নিকাণ্ডে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন অযোধ্যা থেকে ফেরা করসেবক। সেই ঘটনার পরই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে গুজরাত জুড়ে। অভিযোগ, সরকারি মদতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালায় সে রাজ্যের মুসলিমদের উপর। দাঙ্গার বলি হন হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। তিনিও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

ঘটনার তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল। গুজরাত সরকারের তরফে গঠন করা হয় একাধিক কমিশনও। গোধরাকাণ্ডের তদন্তে গুজরাত সরকারের গঠিত নানাবতী-মেহতা কমিশন মত দিয়েছিল, ট্রেনে আগুন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এর পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল। গোধরা অগ্নিকাণ্ডের ৯ বছর পরে ২০১১-র পয়লা মার্চ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গোধরাকাণ্ডে ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাদের মধ্যে ১১ জনের ফাঁসির সাজা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ২০ জনের। মুক্তি পান অভিযুক্ত ৬৩ জন।

শাস্তির রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দোষী সাব্যস্তরা গুজরাত হাইকোর্টে একাধিক মামলা করে। ২০১৭-র অক্টোবরে গুজরাত হাই কোর্ট ১১ জনের ফাঁসির সাজা রদ করে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দেয়। ২০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। গুজরাত হাই কোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জেলবন্দিদের দায়ের করা মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন। যদিও গোধরা পরবর্তী দাঙ্গাপর্বে দোষী সাব্যস্ত অনেকেই ইতিমধ্যে গুজরাতের বিজেপির সরকারের সম্মতিতে সাজার মেয়াদ শেষের আগেই জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement