Supreme Court India

এইচআইভি আক্রান্ত বায়ুসেনা কর্তাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্ট মানছে, সামরিক হাসপাতালের ভুলেই রক্ত নিতে গিয়ে এইচআইভি আক্রান্ত হন রাজস্থানের অজমেরের বাসিন্দা, কর্পোরাল পদ মর্যাদার ওই আধিকারিক।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৪০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বায়ুসেনার চাকরি করতে গিয়ে চরম সঙ্কটে পড়ার পরে অবশেষে স্বস্তির মুখ দেখেছেন তিনি। মধ্যজীবনে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজে পাচ্ছেন জনৈক আধিকারিক।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্ট মানছে, সামরিক হাসপাতালের ভুলেই রক্ত নিতে গিয়ে এইচআইভি আক্রান্ত হন রাজস্থানের অজমেরের বাসিন্দা, কর্পোরাল পদ মর্যাদার ওই আধিকারিক। এর বেশ কয়েক বছর পরে রোগ ধরা পড়ায় চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এমনকি স্ত্রীও তাঁকে ‘ছেড়ে’ চলে যান।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে দিল্লির জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন ওই আধিকারিক। তাঁর আবেদন সেখানে বাতিল হয়ে যায়। এ বার সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় বিমান বাহিনীকে এক কোটি ৫৪ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। দিতে হবে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানাও। সুপ্রিম কোর্টের তহবিলেও ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। চাকরি থেকে বরখাস্ত বায়ুসেনা কর্মীর পেনশনের টাকাও শোধ করতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

Advertisement

২০০২ সালে পাঠানকোটের কাছে পাক-সীমান্তে কর্তব্যরত ছিলেন ২৪ বছর বয়সি সেই আধিকারিক। কিছু খেয়ে তাঁর শরীরে বিষক্রিয়া হয়। স্থানীয় সাম্বা সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়। ওই আধিকারিক ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমার রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। ২০০২ সালে সাম্বা মিলিটারি হাসপাতালে কোনও পরীক্ষা না করে সরাসরি রক্ত দেওয়া হয়েছিল।’’ এর ১২ বছর বাদে গান্ধীনগরে কর্মরত অবস্থায় তাঁর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমদাবাদের সামরিক হাসপাতাল থেকে তাঁকে মুম্বইয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশেষ হাসপাতালে সরানো হয়। সেখানেই তাঁর এইচআইভি ধরা পড়ে।

২০১৬ সালে তিনি বায়ুসেনার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তিনি এইচআইভি পজ়িটিভ শুনে তাঁর স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার জন্য জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন তিনি। ২০২১ সালে মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যান।

সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট ও দীপঙ্কর দত্ত তাঁদের রায়ে সাফ জানিয়েছেন, যে পদ্ধতিতে বিমান বাহিনীর ওই আধিকারিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা ভীষণ অন্যায়। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘দেশকে ভালবেসে অনেক আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যুবক, যুবতীরা বিমান বাহিনী, সেনা বাহিনীর মতো মহৎ পেশায় কাজে যোগ দেন। এই চাকরিতে এসে হাসপাতালে চিকিৎসার নামে এ ভাবে কারও জীবন বিপন্ন হলে বাহিনীর মনোবল চুরমার হবে।’’ সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘‘ভারত-পাক সীমান্তে সাম্বা মিলিটারি হাসপাতালে ওই আধিকারিকের দেহে রক্ত দেওয়ার সময়ে কোনও পরীক্ষাই হয়নি। এমনকী ওই হাসপাতালে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই ছিলেন না। ওখান থেকেই তাঁর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়ায়।’’ এইচআইভি আক্রান্ত ওই আধিকারিককের চিকিৎসার খরচও বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষকে বহন করতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

যুদ্ধ জয় শেষে আধিকারিকটি দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নথি হাতে আসেনি বলে জানায় বায়ুসেনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement