ফাইল চিত্র
সাধারণ আফগান থেকে ‘শাসক’ তালিবান—এদের চায়ের পেয়ালায় কি আর ভারতের চিনি পড়বে? তালিবান নেতারা এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন কি না, জানা নেই। তবে অবশ্যই ঘোর চিন্তায় যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের চিনিকল মালিকেরা।
আগামী বছরে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে সেখানকার বিজেপি সরকার আখচাষিদের তুষ্ট করতে আখের দাম বাড়াতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে চিনিকলগুলিকে চাষিদের কাছ থেকে আখ কিনতে বেশি দাম দিতে হবে। অথচ এরই মধ্যে তালিবানের আফগান মুলুক দখল নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন উত্তরপ্রদেশের চিনিকলের মালিকেরা। কারণ, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আফগানিস্তানে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টন চিনি রফতানি হয়। তালিবানের কাবুল দখলের পর থেকে সেই চিনি রফতানি বন্ধ। কবে আবার চালু হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টন চিনি আফগানিস্তানে রফতানি হয়। প্রতি টনের দাম অন্তত ৪০০ ডলার ধরলেও ৪০ কোটি ডলার মূল্যের চিনি রফতানি হয়। চিনি ছাড়াও এ দেশ থেকে খাদ্যশস্য, চা, ওষুধ, জামাকাপড় আফগানিস্তানে যায়। উল্টো দিকে, আবার আফগান-ভূম থেকে আসে নানা রকম মশলা, শুকনো ফল। ভারতের পণ্য মূলত প্রথমে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে তা সড়কপথে পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছয়। তালিবানের অভ্যুত্থানের পর থেকে পাকিস্তান সমস্ত পণ্য চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
চিনিকলগুলির অন্যতম সংগঠন ন্যাশনাল ফেডারেশন অব কোঅপারেটিভ সুগার ফ্যাক্টরিজ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকাশ নাইকনবরে বলেন, “চিনির মরসুম শুরু হয় অক্টোবর থেকে। চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আপাতত স্বস্তির কথা হল, এ বছরে প্রায় ৭ লক্ষ টন চিনি ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে পৌঁছে গিয়েছে। চিনিকল মালিকদের হাতে তার দাম বাবদ টাকাও এসে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, আগামী বছর কী হবে?”
তালিবান নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজ়াই বার্তা দিয়েছেন, তাঁরা অতীতের মতোই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। এক বিবৃতিতে শের মহম্মদের মন্তব্য, “পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” নাইকনবরে বলেছেন, “এই বিবৃতিকে স্বাগত। কিন্তু অনেক যদি এবং কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। কী ভাবে পণ্য যাবে, আর্থিক লেনদেন কোন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে হবে, সেই সব প্রশ্ন থাকছে।”
তা হলে এত দিন আফগানিস্তানে যে চিনি যেত, তার কী হবে? বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের আশা এ বছর ব্রাজিল, তাইল্যান্ডের মতো চিনি রফতানিকারী দেশ নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে। তারা যে সব দেশে চিনি রফতানি করে, ভারত সেখানকার বাজার ধরতে পারে। নাইকনবরে বলেন, “এ ক্ষেত্রে সুবিধা হল, ওই সম্ভাব্য বাজারের দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা আমাদের প্রতিবেশী। মধ্য এশিয়া, আফ্রিকার দেশও রয়েছে। আশা করি, আগামী মরসুমেও ধাক্কা সামলানো যাবে।”