Lockdown

‘অর্থনীতির কাঁটা হঠাৎ লকডাউন’

আনলক অর্থাৎ লকডাউন শিথিল করার পর্ব শুরুর সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “জান ভি, জহান ভি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০২
Share:

ছবি: পিটিআই।

সুড়ঙ্গের শেষে ক্ষীণ আলোর দেখা মিলছে অবশেষে। কিন্তু রাজ্যে-রাজ্যে, কিংবা জেলা স্তরে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা বন্ধ না-হলে, অর্থনীতিতে দ্রুত প্রাণ ফেরা কঠিন হবে বলে অভিমত শিল্পমহলের। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবনের পাশাপাশি জীবিকাকেও প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি।

Advertisement

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১১৫টি অগ্রণী সংস্থার কর্ণধারদের নিয়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছে বণিকসভা সিআইআই। তাতে দেখা যাচ্ছে, শিল্পমহলের আশা, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে উৎপাদন ক্ষমতার অন্তত অর্ধেক (৫০%) ব্যবহার করা সম্ভব হতে পারে। করোনার আক্রমণের পরে এই প্রথম। সাবান-শ্যাম্পু-বিস্কুটের মতো দ্রুত বিক্রি হয় এমন ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি), টিভি-ফ্রিজ-মোবাইলের মতো বৈদ্যুতিন পণ্য, ট্রাক্টর-মোটরবাইক সমেত বিভিন্ন গাড়ি ইত্যাদির চাহিদা সবে মুখ তুলতে শুরু করেছে। সামনে উৎসবের লম্বা মরশুম আর এত দিন ‘জমে থাকা কেনাকাটার খিদে’-র যুগলবন্দিতে বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার চাহিদার পালে আরও বাতাস লাগার সম্ভাবনা। যার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করতে পারে অর্থনীতিও। কিন্তু থেকে-থেকে হঠাৎ ঘোষিত আঞ্চলিক লকডাউন তাতে জল ঢেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা শিল্পসংস্থাগুলির।

আনলক অর্থাৎ লকডাউন শিথিল করার পর্ব শুরুর সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “জান ভি, জহান ভি।” সমীক্ষার রিপোর্ট কার্যত সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। বলা হয়েছে, “জীবন রক্ষার পাশাপাশি জীবিকাকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির। কোনও রাজ্য বা জেলায় হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা বন্ধ করা জরুরি। কারণ এতে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া ধাক্কা খায়। কাঙ্ক্ষিত লাভ হয় না জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রেও।”

Advertisement

কোভিডের সঙ্গে যুঝতে দীর্ঘ লকডাউন আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, সে বিষয়ে বহু অর্থনীতিবিদ গোড়া থেকেই সন্দিহান। তাঁদের মতে, এতে অর্থনীতি খাদের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তার উপরে যদি এখনও আঞ্চলিক ভাবে হঠাৎ-হঠাৎ লকডাউন ঘোষণার প্রবণতা জারি থাকে, তা হলে শিল্পগুলি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও কুঁকড়ে যাবে।

এক তো চাহিদা এখনও আগের জায়গায় ফেরেনি। তার উপরে এই অনিশ্চয়তা জারি থাকলে, বেশি করে জিনিসপত্র তৈরির প্রশ্নে আরও দোটানায় পড়বে সংস্থাগুলি।

একই কথার প্রতিফলন বণিকসভাটির সমীক্ষার রিপোর্টেও। বলা হয়েছে, ৩২ শতাংশ সংস্থার সিইও মনে করেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চাহিদা মুখ তুলবে বেশ খানিকটা। আবার ২৭ শতাংশের ধারণা, চাহিদা থাকবে আগের বছরের ওই সময়ের মতোই। অর্থনীতির নড়বড়ে দশা মাথায় রেখে দ্বিতীয়ার্ধে আয় বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদী মাত্র ৩১% সিইও। কৃষিপণ্যের পাশাপাশি মূলত ভোগ্যপণ্য, বৈদ্যুতিন পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি ইত্যাদির চাহিদা মাথা তোলার উপরে ভরসা রাখছেন তাঁরা। অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টেও দাবি, কোভিড অতিমারির মধ্যেই যে রকম ঝোড়ো সংস্কারের রাস্তায় সরকার হেঁটেছে, যে ভাবে সাজানো হচ্ছে ‘আত্মনির্ভর ভারতের ঘুঁটি’, দীর্ঘ মেয়াদে তার সুফল পাবে অর্থনীতি।

কিন্তু এখনও মানুষের যাতায়াত ও পণ্য চলাচল কম। চাহিদা কম অধিকাংশ পণ্য-পরিষেবার। ধুঁকছে পর্যটন, বিমান পরিবহণ, আবাসনের মতো বহু শিল্প। কাজ খুইয়েছেন এবং খোয়াচ্ছেন বহু মানুষ। এই অবস্থায় অর্থনীতি সত্যিই কত তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকে। এই পাহাড়প্রমাণ সমস্যা আর ঝুঁকির উপরে ‘উটকো’ লকডাউন গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে শিল্পমহলের আশঙ্কা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement