Sonic Boom

বায়ুসেনার গুপ্তচর মিগ-২৫ এর শব্দব্রহ্মে যে দিন ঘুম উড়েছিল ইসলামাবাদের

ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন? জানা যায় প্রবীণ সাংবাদিক অমিত বড়ুয়ার লেখা, ‘ডেটলাইন ইসলামাবাদ’ বইটির ২১ নম্বর পাতায় চোখ রাখলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ১৬:৪০
Share:

মিগ-২৫ আর, শব্দের চেয়ে তিনগুণ দ্রুত গতিতে, ৬০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে পারত ভারতের এই গুপ্তচর বিমান। ছবি- ফাইল চিত্র।

২০ মে, বুধবার দুপুরে বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম উড়েছিল বেঙ্গালুরুর বাসিন্দাদের। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রক টুইট করে জানায়, বায়ুসেনার একটি বিমানের পরীক্ষামূলক উড়ানের সময় ওই ঘটনা ঘটে। বিমানটি শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে উড়তে উড়তে গতি কমানোই ওই আওয়াজের উৎস। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘সনিক বুম’।শব্দের চেয়েও দ্রুত গতিতে কিছু উড়লে এই আওয়াজ হয়। বছর তেইশেক আগে ঠিক মে মাসের দুপুরে, এমন একটা সনিক বুম-ই শিড়দাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত বইয়ে দিয়েছিল পাক সেনার। ইসলামাবাদের আকাশে হঠাৎ কী ঘটে গেল জানতে তৎক্ষণাৎ আকাশে উড়েছিল পাক বিমানবাহিনীর অত্যাধুনিক এফ১৬ যুদ্ধবিমান। অবশ্য তাতে কাজের কাজ হয়নি। যা হওয়ার তা ততক্ষণে হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন? জানা যায় প্রবীণ সাংবাদিক অমিত বড়ুয়ার লেখা, ‘ডেটলাইন ইসলামাবাদ’ বইটির ২১ নম্বর পাতায় চোখ রাখলে।

২৭ মে, ১৯৯৭। সকালবেলা হঠাৎ ‘একাধিক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিল ইসলামাবাদ। সে দিন বিকেলেই পাক বিমানবাহিনী ঘোযণা করে যে ওই বিকট আওয়াজের উৎস ছিল ভারতের মিগ-২৬আর গুপ্তচর বিমান’। সঙ্গত কারণেই ওই ঘটনার কথা স্বীকার করেনি ভারত। অমিত বড়ুয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘ওই ঘটনার অনেক মাস পরে বায়ুসেনার এক আধিকারিক তাঁকে জানান যে সে দিন পাকিস্তানের ওই দাবি ঠিকই ছিল। ভারত নানা সময়ে শত্রু দেশের ছবি তোলার জন্য কাজে লাগাত এই বিমানকে। পাকিস্তানের সে বার কিছুই করার ছিল না, কারণ ভারতের এই মিগ উড়তে পারত ৬০,০০০ ফুট উঁচু দিয়ে। এফ১৬ তো বটেই পাক বিমানবাহিনীর কাছে এমন কোনও বিমান ছিল না যা অত উঁচুতে উড়তে পারে’। চুপচাপ ওই মিশন শেষ করে ফিরে গেলেও পাক বিমানবাহিনীর সীমাবদ্ধতাকে খানিক খোঁচা দিতেই সে দিন ওই বিকট আওয়াজ করে দেশে ফিরে আসে ভারতের ওই গুপ্তচর বিমান।

Advertisement

গুগল ম্যাপ, জিপিএস-হীন সেই জমানায় চোখের আড়ালে থেকে শত্রুঘাঁটির ছবি তুলতে মিগ-২৫ ছিল এক কথায় অদ্বিতীয়। এটাই ছিল বিখ্যাত রুশ এয়ারক্রাফট ডিজাইনার মিখাইল গেরেভিচের নিজের হাতে ডিজাইন করা শেষ বিমান। ন্যাটো এই বিমানটির কোডনেম দিয়েছিল ‘ফক্সব্যাট’।

আরও পড়ুন- শহরে বিদ্যুৎ ফিরছে একটু একটু করে, এখনও আলো-জল নেই বহু এলাকায়

একে তো এই বিমান উড়তে পারত শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ দ্রুতবেগে। মানে ৩ হাজার ৪৯৪ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে। তার উপর এটা ৬০ হাজার ফুট উঁচুতেও উড়তে পারত। মানে মাউন্ট এভারেস্টের তিনগুণ উচ্চতা দিয়ে ওড়ার ক্ষমতা ছিলএই বিমানের। ১৯৮১ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার ট্রাইসনিক্স স্কোয়াড্রনেযোগ দেয় এই বিমান। ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এর ছদ্মনাম ছিল ‘গড়ুর’। সেই সময় তো বটেই, এই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন দক্ষতা খুব কম বিমানেরই আছে।এমনকি, বায়ুসেনার রাফাল, সুখোই-৩০ এমকেআই, মিরাজ ২০০০ইত্যাদিরগতিও এর তুলনায় কম। তাই পাকিস্তানের র‌্যাডারেসে দিন ধরা পড়লেও তার টিকিও স্পর্শ করতে পারেনি কেউ।

তবে বদলে যাওয়া যুগে গুপ্তচরবৃত্তিতে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি চলে আসায় এই বিমান কার্যকারিতা হারায়। এই বিমানের প্রাচীন অ্যানালগ ক্যামেরায় তোলা ছবির চেয়েড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবি বা উপগ্রহ চিত্র আরও অনেক নিখুঁত, নিরাপদ আর সস্তাও বটে। তাই ২০০৬ সালের সেই মে মাসে বায়ুসেনা থেকে অবসর দেওয়া হয় ক্ষিপ্রগতি এই গুপ্তচরকে।

আরও পড়ুন- পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে এ বার সরাসরি তোপ শোভনের

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement