অযোধ্যার সাব-ইনস্পেক্টর রঞ্জিত যাদব।
তিনি অভাব দেখেছেন। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনো’ একটি পরিবারে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয় সেই অভিজ্ঞতাও আছে। অর্থের অভাবে কত ভাল মেধা অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যায়, সেই উদাহরণও তিনি পেয়েছেন। নিজের জীবন দিয়ে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আর তাই যখন নিজের এলাকার পথশিশুদের প্রায়ই ভিক্ষা করতে দেখতেন, মনে মনে স্থির করে নিয়েছিলেন, ওরা যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।
তিনি এক দিকে যেমন অপরাধ দমন করেন, অন্য দিকে শিক্ষার আলোও জ্বালান। তিনি উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার সাব-ইনস্পেক্টর রঞ্জিত যাদব। বেতনের টাকায় অযোধ্যার পথশিশুদের বিনামূল্যে পড়ান তিনি। শুধু পড়ানোই নয়, তাঁদের জন্য একটি স্কুলও খুলেছেন রঞ্জিত।
বেশ কয়েক মাস হয়ে গিয়েছে রঞ্জিত স্কুল খুলেছেন। তাঁর স্কুলে ৫০ জন পড়ুয়া লেখাপড়া করে। তাদের বই-খাতা এবং পড়াশোনার যাবতীয় জিনিস রঞ্জিত নিজেই কিনে দেন। বাড়ি থেকে যখন কর্মস্থলে যেতেন প্রতি দিনই ওই পথশিশুদের দেখতেন। ওরা ভিক্ষা করছে, এই বিষয়টি মনে খুব দাগ কেটেছিল রঞ্জিতের। যে হেতু নিজেও একটি অভাবী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, তাই ধাক্কাটা যেন আরও বেশি লেগেছিল। সেই থেকেই পথশিশুদের শৈশবকে এক নতুন মোড়কে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা শুরু করেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে রঞ্জিত বলেছেন, “আমি ওদের জন্য স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিই। স্কুলেই ওদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছি। যখন দেখতাম ওদের বাবা-মা ভিক্ষা করছেন, শিশুগুলি ভিক্ষা করছে, খুব খারাপ লাগত। এর পরই শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি। আমার ইচ্ছার কথা তাঁদের জানাতে ওঁরাও সম্মতি দেন। সেই থেকে পথচলা শুরু।”
রঞ্জিতের স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন ৫০-এ গিয়ে ঠেকেছে। গাছের নীচে খোলা জায়গায় এই শিশুগুলিকে পড়ান রঞ্জিত। এক খুদে পড়ুয়ার কথায়, “আমরা অনেক দূর পড়াশোনা করতে চাই। এখানে পড়তে ভাল লাগে। প্রতি দিন আমরা আসি।” এক অভিভাবক জানিয়েছেন, সাব-ইনস্পেক্টর রঞ্জিত যদি এগিয়ে না আসতেন তা হলে তাঁদের সন্তানরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকত। তাই রঞ্জিতই এখন অযোধ্যার ‘হিরো’।