এই প্রশ্ন ঘিরেই বিতর্ক।
ফের শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের অভিযোগ। এ বার ঘটনাস্থল ত্রিপুরা। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের একটি স্কুলের প্রশ্নপত্রে বিজেপিকে নিয়ে টিকা লিখতে দেওয়া হল। তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ত্রিপুরার উনকোটি জেলার শ্রীরামপুর সূর্যমণি মেমোরিয়াল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে নবম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল। দু’পাতার প্রশ্নপত্রের প্রথম অংশে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন ছিল। তাতে মুসোলিনি, হিটলার এবং তোজোর-র মধ্যে ‘বিশ্ব সন্ত্রাস’ বলতে ঠিক কাকে বোঝায় বেছে নিতে বলা হয়। প্রশ্নপত্রের দ্বিতীয় অংশে রাজ্যের শাসকদল বিজেপিকে নিয়ে টিকা লিখতে বলা হয়। তাতে অবশ্য যে কোনও একটি বিষয় বেছে নেওয়ার বালাই ছিল না। কারণ, ৩ নম্বরের ওই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। বিষয়টি চাউর হতেই বিতর্ক শুরু হয়।
ঘটনায় স্তম্ভিত বিরোধীপক্ষ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে সব ক্ষেত্রে গৈরিকীকরণ মেনে নেওয়া যায় না। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’’ স্কুলের অধ্যক্ষ অভিজিৎ ভট্টাচার্য যদিও প্রশ্নের মধ্যে কোনও গলদ খুঁজে পাননি। তবে এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল বলে মেনে নেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘প্রশ্নে যদিও ভুল নেই। তবে বিষয়টি সামনে আসার পরই পদক্ষেপ গ্রহণ করি। বিষয়টি যিনি পড়ান, তাঁকে জিজ্ঞাসা করি ওই প্রশ্ন দেওয়া হল কেন? কিন্তু কী আর করা যাবে, নবম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বইয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে।’’ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সচিব প্রদীপ সেনগুপ্ত সিলেবাস খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন শোভন, মেয়র পদও ছাড়তে বললেন মমতা
আরও পড়ুন: প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে ঝাঁপ ফেলল কলকাতার ভ্রমণ সংস্থা!
তবে তাতেই বিতর্ক মেটেনি। ত্রিপুরা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তাপস দে গোটা ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতি মুক্ত রাখা উচিত।’’ বিজেপি মুখপাত্র অশোক সিনহা অবশ্য বলেন, ‘‘সিলেবাসের মধ্য থেকে প্রশ্ন এলে সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষই সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজনীতিকদের অযথা নাক গলানো উচিত নয়।’’ তবে দলের প্রদেশ সম্পাদক নীতীশ দে পূর্বসূরি বামফ্রন্টের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এত দিন তো বাইরের ইতিহাস পড়ানো হত। ভিয়েতনাম সমেত অন্যান্য জায়গায় সিপিএমের লং মার্চের কথা লেখা থাকত বইয়ে। বিশ্ব ইতিহাস গুলে খাইয়ে দেওয়া হত পড়ুয়াদের। কিন্তু দেশের রাজনীতি নিয়ে কিচ্ছুটি বলা হত না। আর খামোখা এত বিতর্ক কেন? জাতীয় দলের বর্ণনায় কংগ্রেসের কথাও তো রয়েছে বইয়ে!’’
ত্রিপুরায় এই ধরনের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে বাম জমানায় ভারতের ইতিহাসের কিছুটা অংশ বাদ দিয়ে কার্ল মার্কসকে নিয়ে নতুন অধ্যায় যোগ করা হয়েছিল। তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এ বছর মার্চ মাসে সেখানে বিজেপি সরকার আসার পরই স্কুলের সিলেবাস বদল করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।