নগ্ন করে মার, নয়া তথ্য দেহরাদূনে ছাত্র খুনে

ঘটনাটি গত ১০ মার্চের হলেও উত্তরাখণ্ডের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের হস্তক্ষেপের পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

 সংবাদ সংস্থা

রানিপোখরি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুলের পাশের মুদির দোকান থেকে বিস্কুট চুরির চেষ্টা করেছিল সপ্তম শ্রেণির এক পড়ুয়া। স্কুলে অভিযোগ এলে শাস্তি হিসেবে হস্টেলের ছাত্রদের নিয়ে রবিবারের ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতেই খেপে যায় উঁচু ক্লাসের ছাত্র শুভঙ্কর ও লক্ষ্মণ। ব্যাট-উইকেট নিয়ে চড়াও হয় ১২ বছরের ওই পড়ুয়ার উপরে। এর পরে ছ’ঘণ্টা ধরে চলে মারধর-অত্যাচার। যার ফলে সে রাতেই বমি করতে করতে মারা যায় ওই পড়ুয়া। দেহরাদূনের একটি বোর্ডিং স্কুলে এক ছাত্র খুনের তিন সপ্তাহ বাদে উঠে এসেছে এই তথ্য। অভিযোগ, গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ক্যাম্পাসের বাইরেই দেহটি কবর দেয় স্কুল। ২০০ কিলোমিটার দূরে উত্তরপ্রদেশের হাপুরে ছেলেটির বাবার কাছে খবর পৌঁছয় প্রায় ২৪ ঘণ্টা বাদে।

Advertisement

ঘটনাটি গত ১০ মার্চের হলেও উত্তরাখণ্ডের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের হস্তক্ষেপের পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। ২৩ মার্চ খুনের প্রধান দুই অভিযুক্ত শুভঙ্কর ও লক্ষ্মণ, হস্টেলের তিন কর্মী, শারীরশিক্ষার শিক্ষক, হস্টেল ওয়ার্ডেন ও স্কুল পরিচালন কমিটির এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রধান অভিযুক্তদের এক জন পঞ্জাব, অন্য জন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তারা স্বীকার করেছে, ওই কিশোরকে ‘শিক্ষা দিতেই’ ঘরে ঢুকে ব্যাট, উইকেট দিয়ে পেটায় তারা। এর পরে তাকে বাস্কেটবল কোর্টে নিয়ে গিয়ে দৌড় করায়।

ওই কিশোরের রুমমেট, খুনের মামলার প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, হস্টেলের ছাদে নিয়ে গিয়ে নগ্ন করে ফের এক প্রস্ত মারধর করা হয় ওই কিশোরকে। জল চাইলে ট্যাঙ্কের নোংরা জল খেতে বাধ্য করা হয়। এর পরে খাওয়ার ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে জোর করে রাজমা-চাওল খাওয়ায় শুভঙ্কররা। তত ক্ষণে নেতিয়ে পড়েছে ওই পড়ুয়া। ছেড়ে দেওয়ার জন্য বার বার হাতেপায়ে ধরতে থাকে সে। কিন্তু সে কথা কান দেয়নি দুই অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরের পকেট থেকে টাকা বার করে অন্য এক ছাত্রকে দিয়ে চিপস, বিস্কুট কিনিয়ে আনে তারা। এর পরে জোর করে সেগুলি মুখে গুঁজে দেওয়া হয়। জল চাইলে শৌচাগার থেকে নোংরা জল দেওয়া হয়। ওই দু’জন স্বীকার করেছে, ওই কিশোরের মুখ এমন ভাবে জলের বালতিতে ঠেসে ধরে যে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়।

Advertisement

ছ’ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালানোর পরে ওই কিশোরকে খাওয়ার ঘরে এক কোণে বসিয়ে দেয় অভিযুক্তেরা। তার আগে মুখ পরিষ্কার করে, জামাকাপড় ঠিক করে দেয়। সন্ধ্যায় ছেলেরা পড়তে বসেছে কি না তা দেখতে এসে ওয়ার্ডেন দেখেন, মাথা নামিয়ে বসে রয়েছে কিশোর। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় সে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসা চলাকালীন মারা যায় পড়ুয়া। যদিও হাসপাতাল জানিয়েছে, মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল তাকে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ খাদ্যে বিষক্রিয়া বলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ২২ মার্চ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, এটি আসলে খুনের ঘটনা। কিশোরের শরীরে ১৭টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। বাবার অভিযোগ, তাকে না জানিয়েই হস্টেলে নিয়ে গিয়ে তার ছেলেক কবর দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও স্কুল ও পুলিশ জানিয়েছে, ছেলেটির বাবা হলফনামায় সই করে জানান তিনি হাপুরে ছেলের দেহ নিয়ে যেতে পারবেন না। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, এই হস্টেলটি নথিভুক্ত রয়েছে অনাথ আশ্রম হিসেবে। স্কুল বা হস্টেল চালানোর আইনি কাগজপত্র নেই। গত বছরেও এখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় একটি ছেলে। মেয়েদের হস্টেলে গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার অভিযোগও উঠেছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement