নয়াদিল্লির সাউথ অ্যাভিনিউতে তৃণমূলের ধর্না। —নিজস্ব চিত্র।
দিল্লি পুলিশের নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপের মাঝেই রাজধানীতে ধর্না শুরু করলেন তৃণমূল সাংসদরা। সাউথ অ্যাভিনিউতে মুকুল রায়ের বাংলোর সামনে ধর্নায় বসেছে তৃণমূল। গত বৃহস্পতিবার নিজেদের সংসদীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আচমকা যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা, তাতে ঘোর অস্বস্তিতে পড়ে দিল্লি পুলিশ। সেই কারণেই আজ তৃণমূল সাংসদরা সংসদীয় কার্যালয়ে ঢোকার পর থেকে সর্বক্ষণ তাঁদের গতিবিধির উপর নজর রেখেছে দিল্লি পুলিশ।
নোট বাতিলের বিরোধিতায় এবং দুই সাংসদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সোমবার দিল্লিতে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখাবে বলে আগেই স্থির হয়েছিল। খোদ দলনেত্রীর নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে দিল্লিতে আজ ঠিক কী কর্মসূচি পালিত হবে, তা তৃণমূল সংসদীয় দল আগে জানায়নি। সংসদ ভবনে তৃণমূলের সংসদীয় দফতরে বেলা ১২টা নাগাদ বৈঠকে বসে কর্মসূচি স্থির করা হবে, এমনটাই জানানো হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। কথা মতো বেলা ১২টার মধ্যেই তৃণমূল সাংসদরা একে একে সংসদে পৌঁছে যান। ২৯ জন সাংসদকে নিয়ে বৈঠক শুরু হয়।
সংসদ ভবনে তৃণমূল সাংসদরা পৌঁছনোর পর থেকেই কড়া পুলিশি নজরদারি ছিল তাঁদের উপর। কারণ গত বৃহস্পতিবার এ ভাবেই সংসদীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা, তার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আচমকা সাউথ ব্লকের দিকে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন এবং পিএমও-র সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। যে ভাবে বিনা বাধায় তৃণমূল সাংসদরা পিএমও-র সামনে পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন সে দিন, তাতে দিল্লি পুলিশকে এক রাশ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। মিনিট দশেকের মধ্যেই বাহিনী পাঠিয়ে সাউথ ব্লক চত্বর থেকে তৃণমূল সাংসদদের সে দিন পুলিশ তুলে নিয়ে য়ায়। কিন্তু পিএমও-র সামনে হইচই জুড়ে দিয়ে ততক্ষণে সারা দেশের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তাঁদের লক্ষ্য পূরণ হয়ে গিয়েছিল। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সে দিন দিল্লি পুলিশের ভূমিকায় মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আজ, সোমবার, তাই কোনও ঝুঁকি নেননি পুলিশ কর্তারা। গোড়া থেকেই কড়া নজরদারি শুরু হয়।
১৮১, সাউথ অ্যাভিনিউতে চলছে ধর্না। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সাংসদরা আজ অবশ্য কোনও ভিভিআইপি-র বাড়ি বা দফতরে অভিযান করার চেষ্টা করেননি। তাঁরা সংসদীয় দফতর থেকে বেরিয়ে সাউথ অ্যাভিনিউ যান। মুকুল রায়-সহ তৃণমূলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাদের বাসভবনই হল এই সাউথ অ্যাভিনিউতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এলে এই সাউথ অ্যাভিনিউতেই থাকেন। দলের জাতীয় কার্যালয় যে হেতু এখনও তৈরি হয়নি, সে হেতু ১৮১, সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাংলোটিই (মুকুল রায়ে বাংলো) তৃণমূলের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই বাংলোর সামনেই পৌনে একটা নাগাদ ধর্নায় বসে পড়েন তৃণমূল সাংসদরা। মুকুল রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, শিশির অধিকারী, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, সুলতান আহমেদ, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র খান, অনুপম হাজরা, অর্পিতা ঘোষ, উমা সরেন, রত্না নাগ, মুমতাজ সঙ্ঘমিতা, ইদ্রিস আলি, দোলা সেন-সহ মোট ২৯ জন তৃণমূল সাংসদ ধর্না শুরু করেন।
আরও পড়ুন: কালো টাকা নিয়ে মোদী-জেটলি যুগলবন্দি
পুলিশের অবশ্য এই ধর্না নিয়েও আপত্তি ছিল। দিল্লিতে তৃণমূলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাউথ অ্যাভিনিউয়ের দু’প্রান্তেই সকাল থেকে পুলিশি তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। মুকুল রায়ের বাংলোর সামনে ধর্না শুরু হতেই পুলিশ তৃণমূল সাংসদদের ধর্না বন্ধ করতে বলে। কিন্তু ডেরেক, সৌগতরা পুলিশ কর্তাদের প্রশ্ন করেন, রাস্তা বন্ধ না করে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে যখন ধর্না চলছে, তখন কেন সে ধর্না বন্ধ করতে বলা হচ্ছে? পুলিশ কর্তারা এর পর ধর্নায় আর বাধা দেননি। তবে দ্রুত বিশাল বাহিনী এনে গোটা সাউথ অ্যাভিনিউ ঘিরে ফেলে হয়। তৃণমূল সাংসদরা যাতে পথচলতি যানবাহনে উঠে কোথাও চলে যেতে নারেন, তার জন্য সাউথ অ্যাভিনিউতে সব যান চলাচল পুলিশ বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ধর্না এখনও চলছে। প্রয়োজন হলে তৃণমূল সাংসদদের যাতে আজ আবার তুলে নিয়ে যাওয়া যায়, তার ব্যবস্থাও তৈরি রেখেছে দিল্লি পুলিশ।