মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ জঙ্গি তালিকায় জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের অন্তর্ভুক্তিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক বিরাট সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে বিজেপি সরকার। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ জঙ্গি তালিকাভুক্ত করার একটা প্রতীকী মূল্য অবশ্যই রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানে কিছুটা চাপে থাকবে মাসুদ। কিন্তু এর জন্য ভবিষ্যতে তার জঙ্গি কার্যকলাপ যে একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মাসুদের সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদকে দীর্ঘদিন আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদকেও একই ভাবে নিষিদ্ধ করে রেখেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, এর ফলে এই সব জঙ্গি গোষ্ঠীর ভারত-বিরোধী নাশকতা একচুলও কমেনি। এই নিষেধাজ্ঞা কাঁধে নিয়েও পাকিস্তানের মাটিতে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে এরা। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সদিচ্ছার উপরেই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নির্ভর করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞাগুলিকে (সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, যাতায়াত নিষিদ্ধ) অন্যান্য দেশ মেনে চলবে ঠিকই। কিন্তু পাকিস্তানের মাটিতে তা বলবৎ করতে হলে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইন আনা প্রয়োজন। ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তানের বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা প্রবল ভাবে পাক সেনা এবং আইএসআই-এর প্রভাবযুক্ত। হাফিজ সইদের ক্ষেত্রেও পাকিস্তান এমন কোনও পদক্ষেপ করেনি যাতে প্রকৃতভাবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ হয়। মাসুদ আজহারের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করায় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানিয়েছেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী পাকিস্তানকে মাসুদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তার যাবতীয় গতিবিধি বন্ধ করতেহবে। তার কাছে যাতে সরাসরি বা ঘুরপথেও কোনও অস্ত্র না পৌঁছয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কমিটি যে সব পদক্ষেপ করতে বলেছে, তা পালন করা পাকিস্তানের দায়িত্ব।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে সাউথ ব্লক আশা করছে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আর কিছু না হোক, জঙ্গিদের অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে নজরদারি আন্তর্জাতিক সংস্থা এফএটিএফ ইসলামাবাদের উপরে চাপ আরও বাড়াবে। জুন মাসে বসছে এফএটিএফ-এর সম্মেলন। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রেখেছে তারা। শুধুমাত্র মাসুদ আজহার নয়, সার্বিক ভাবে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির হাতে পুঁজি পৌঁছনো আটকাতে কী ব্যবস্থা ইমরান খান সরকার নিয়েছে, তা খাতায়-কলমে দেখতে চাওয়া হবে। সেখানে সদুত্তর দিতে না পারলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুদান আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এফএটিএফ-এর।