অবসর নিলেন বিতর্কিত বিচারপতি
হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতি হিসাবে তাঁর বিরুদ্ধেই প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। তিন রাজ্যের পুলিশ তাঁর খোঁজ পায়নি। হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতি হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় ইতিহাস তৈরি করেছিলেন আগেই। এ বার ফেরার অবস্থাতেই অবসর নিয়ে ফের একটি ‘রেকর্ড’ গড়লেন বিচারপতি সি এস কারনান। দেশের ইতিহাসে প্রথম বিচারপতি হিসাবে ফেরার অবস্থায় অবসর নিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন এই বিচারপতি।
শীর্ষ আদালতকে অবমাননা করার অভিযোগে গত মাসের ৯ তারিখ কারনানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৭ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রথমে অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের এই বিচারপতির বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছিল বেঞ্চ। কিন্তু পাল্টা রায়ে ডিভিশন বেঞ্চের সদস্যদের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন কারনান। এর পরেই কারনানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে শীর্ষ আদালত। সেই থেকেই ফেরার কারনান। প্রথমে জানা গিয়েছিল, চেন্নাইয়ে নিজের বাড়িতে আছেন তিনি। কিন্তু সেখানে তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। এক বার শোনা যায়, সীমান্ত পেরিয়ে নেপাল বা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন কারনান। কিন্তু তারও কোনও প্রমাণ মেলেনি। ইতিমধ্যে আইনজীবীর মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে সেই সুপ্রিম কোর্টেরই দ্বারস্থ হন কারনান। তাঁর আইনজীবী ম্যাথিউজ দাবি করেন, রাষ্ট্রপতি বিচারপতিকে সাক্ষাতের সময় দিলে তবেই ফিরতে পারেন তিনি। ম্যাথিউজ অভিযোগ করেন, ‘‘বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানো হচ্ছে। বিচারপতি কারনানের উপরে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। তিনি আইনি পথেই যা করার করছেন।’’
আরও পড়ুন: বিচারপতি কারনানকে ছ’মাসের কারাদণ্ড দিল সুপ্রিম কোর্ট
কর্মরত বিচারপতিকে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কলেজিয়াম যাঁকে নিয়োগ করেছিল, তাঁকেই জেলে পাঠাতে চেয়ে কী বার্তা দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট? আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহের মতো কারও কারও যেমন মত, সুপ্রিম কোর্ট চাইলে বিচারপতির ইমপিচমেন্টের জন্য সংসদকে আর্জি জানাতে পারত। কিন্তু কোনও বিচারপতির বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা সংবিধানে নেই। শুনানির সময়ে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মনীন্দ্র সিংহ. কে কে বেণুগোপাল, রূপেন্দ্র সিংহ সুরির মতো প্রবীণ আইনজীবীরা মেনে নেন, কারনান যা করছেন তা আদালতের চূড়ান্ত অবমাননা। এর কড়া শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু শাস্তির নির্দেশ এক মাস পরে, তাঁর অবসরের পর দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে আইনজীবী বেণুগোপাল সংশয়ে ছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, কোনও কর্মরত বিচারপতির কারাদণ্ড হলে তাতে বিচারবিভাগের গায়েই কলঙ্ক লাগবে।
যুক্তি, পাল্টা যুক্তির মধ্যেই অবসর নিলেন বিচারপতি সি এস কারনান। তবে শেষ হয়েও শেষ হল না ভারতীয় বিচারবিভাগের ইতিহাসের একটা বিতর্কিত অধ্যায়ের।