রায় বিশেষ মহিলা আদালতের

অ্যাসিডে খুন নার্সকে, ফাঁসির সাজা মুম্বইয়ে

স্রেফ হিংসে হয়েছিল মেয়েটাকে দেখে। কথায় কথায় পাশের বাড়ির ‘ভাল’ মেয়েটার কথা টেনে আনতেন তার বাবা-মাও। সহ্য হয়নি ছেলেটার। আর তাই সালফিউরিক অ্যাসিড ছুড়ে মেয়েটাকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল অঙ্কুরলাল পানোয়ার নামে বছর তেইশের ছেলেটা। কয়েকদিন লড়াইয়ের পর মারা যান প্রীতি রাঠি নামে পেশায় নার্স ওই মহিলা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

প্রীতি রাঠি।

স্রেফ হিংসে হয়েছিল মেয়েটাকে দেখে। কথায় কথায় পাশের বাড়ির ‘ভাল’ মেয়েটার কথা টেনে আনতেন তার বাবা-মাও। সহ্য হয়নি ছেলেটার। আর তাই সালফিউরিক অ্যাসিড ছুড়ে মেয়েটাকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল অঙ্কুরলাল পানোয়ার নামে বছর তেইশের ছেলেটা। কয়েকদিন লড়াইয়ের পর মারা যান প্রীতি রাঠি নামে পেশায় নার্স ওই মহিলা। ২০১৩ সালের এই ঘটনায় অঙ্কুরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন সরকারি আইনজীবী। আজ, বৃহস্পতিবার ওই হামলায় অভিযুক্ত অঙ্কুরকে মৃত্যুদণ্ড দিল মুম্বইয়ের বিশেষ মহিলা আদালত!

Advertisement

মুম্বইয়ের মহিলা আদালতের বিশেষ বিচারক এএস শিন্ডে এ দিন অঙ্কুরের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন। মামলার সওয়াল-জবাবে আদালতে উঠে আসে অ্যাসিড-হামলা কী ভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে দেশজুড়ে। বার বার ফিরে আসে কী ভাবে মুহূর্তের দুর্বলতায় নয়, বরং ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলা চলছে।

গত মঙ্গলবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) এবং ৩২৬-বি (অ্যাসিড ছোড়া) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয় অঙ্কুর। আর গত কালই আদালতে বিশেষ সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম বলেছিলেন প্রীতির উপর অ্যাসিড-হামলা ‘বিরল থেকে বিরলতম’ ঘটনা। অঙ্কুরের আইনজীবী অবশ্য তাকে ‘অল্পবয়সি’ এবং পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বলে স্বল্প শাস্তির সওয়াল করেন। তবে নিকম বলেছিলেন, ‘‘যদি অঙ্কুরকে অল্প শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে অন্য মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’’ ঘটনার সূত্রপাত ২০১৩ সালে। দিল্লির বাসিন্দা ২৪ বছরের প্রীতি মুম্বইয়ের ডিফেন্স হাসপাতালে নার্সের চাকরি পান। তাঁর দিল্লির বাড়ির পাশেই থাকত অঙ্কুর। সে বছর ২ মে, প্রীতির পিছু নিয়ে দিল্লি থেকে মুম্বই এসে পৌঁছয় অঙ্কুরও। দিল্লি-মুম্বই গরিব রথ এক্সপ্রেসে চেপে সে দিনই মুম্বইয়ে পা রাখেন প্রীতি।

Advertisement

চোখেমুখে অনুতাপের লেশমাত্র নেই। রায় ঘোষণার আগে আদালতের পথে অঙ্কুরলাল পানোয়ার। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সেদিনই। বান্দ্রা স্টেশনে ট্রেন থেকে নামতেই প্রীতির মুখে সালফিউরিক অ্যাডিস ছোড়ে মুখে কাপড় ঢাকা অঙ্কুর। হামলার সময় খানিকটা অ্যাসিড খেয়ে ফেলায় ‘মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর’ হয়ে ১ জুন মারা যান প্রীতি। পরের বছর জানুয়ারিতে দিল্লি থেকে গ্রেফতার হয় অঙ্কুর।

মুম্বই পুলিশ এই মামলায় ১৩৩২ পাতার চার্জশিট জমা দেয়। ৯৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। পুলিশ জানায়, হোটেল ম্যানেজমেন্টে স্নাতক পানোয়ার প্রীতির উন্নতি সহ্য করতে পারেনি। পুলিশের দাবি, পড়াশোনা শেষ করার পরেও অঙ্কুর কোনও চাকরি পায়নি, আর পাশের বাড়ির মেয়েটা কী সুন্দর চাকরি পেয়ে গেল— এই নিয়ে ছেলেকে কথা শোনাতেন অঙ্কুরের বাবা-মাও। চার্জশিট বলছে, প্রীতির উন্নতি ঠেকাতে তার মুখ বিকৃত করে দিতে চেয়েছিল পানোয়ার। আর তাই অ্যাসিড হামলার ছক!

গত মঙ্গলবার আদালত ছেলেকে দোষী সাব্যস্ত করার পরই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন অঙ্কুরের মা কৈলাস পানোয়ার। তিনি এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করে বলছেন, তাঁর ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। প্রীতির বাবা অমর সিংহ রাঠি অবশ্য প্রথম থেকেই অঙ্কুরের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে এসেছেন। আজ প্রীতির পরিবারের সেই দাবিতেই সিলমোহর লাগাল আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement