ফাইল চিত্র।
বিহারে জোট জট অব্যাহত।
এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল জেডিইউয়ের বিধায়ক-সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারে থাকা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে কাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নীতীশ। ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে দলের বিধায়ক-সাংসদদের কাছে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের ইঙ্গিত দিতে পারেন তিনি। যদিও দলের বিধায়ক দীনেশ চন্দ্র যাদবের বক্তব্য, ‘‘দলের নেতাদের সঙ্গে নীতীশ প্রতি দু’চার মাস অন্তর বৈঠক করেই থাকেন। কালকের বৈঠকের সঙ্গে সরকার পড়ে যাওয়ার সম্পর্ক নেই।’’ নীতীশ-ঘনিষ্ঠ উপেন্দ্র কুশওয়াহার কথায়, ‘‘এখনই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের সম্ভাবনা কম। অল ইজ় ওয়েল।’’
কিন্তু নীতীশ-ঘনিষ্ঠ শিবিরের অন্য অংশ বলছে, ঘটনাপ্রবাহ যে ভাবে গড়িয়েছে, তাতে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই। নীতীশ শিবিরের দাবি, দু’বছর আগে মন্ত্রিসভা বণ্টন নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধের সূত্রপাত হয়। তার পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতি সমীক্ষা-সহ নানা বিষয়ে বিজেপি-জেডিইউ মতপার্থক্য বেড়েছে। তবে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের ধাঁচে বিজেপি নেতারা বিহারের জেডিইউ বিধায়কদের নীতীশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দল ভাঙানোর উস্কানি দেওয়া শুরু করেন। যা জানতে পেরে দল ধরে রাখতে জোট থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রাজনৈতিক ভাবে ভাসিয়ে দিয়েছেন নীতীশ।
রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করতে আগামিকাল আলাদা আলাদা করে দলীয় বিধায়ক-সাংসদদের বৈঠক ডেকেছেন আরজেডি, কংগ্রেস, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও। বৈঠকের আগেই আরজেডি নেতৃত্ব ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন যে জেডিইউ বিজেপির সঙ্গ পরিত্যাগ করলে নীতীশ কুমারের দলকে সমর্থন করতে আপত্তি নেই তাঁদের। নীতীশের অতীতের দ্বিচারিতার কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস আপাতত পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলার পক্ষপাতী। একই পন্থা নিয়েছে বিজেপিও। সরকার ভাঙাগড়ার খেলায় এখনই নামতে চাইছেন না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। ঠিক কী কারণে বিজেপির সঙ্গে নীতীশ দূরত্ব বাড়াচ্ছেন, তার কোনও ব্যাখ্যা দল না দিলেও, রাজনৈতিক জল্পনা হল, ২০২৪ সালের লোকসভার আগে বিজেপি বিরোধী জোটের ধর্মনিরপেক্ষ মুখ হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা থেকেই ওই পদক্ষেপ করতে চাইছেন নীতীশ।
বিজেপির অনেকেই মনে করছেন, নিজের রাজনৈতিক জীবনের কথা মাথায় রেখে লোকসভা নির্বাচনের দু’বছর আগে মেপে পা ফেলতে চাইছেন নীতীশ। বিহারে জোট সরকার যে ভাবে কাজ করছিল তাতে ছোট শরিক হলেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী রেখে দিতে সমস্যা ছিল না বিজেপির। কিন্তু নীতীশের আশঙ্কা, তাঁর দলের জনভিত্তি ক্রমশ যে ভাবে কমছে, তাতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি কিংবা বিজেপি একক ভাবে বিহারে ক্ষমতায় আসতে পারে। জেডিইউ শিবিরের এক নেতার কথায়, নিজের রাজনৈতিক জীবনের সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তা আশঙ্কা করেই সম্ভবত বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার কৌশল নিতে চাইছেন নীতীশ। কারণ, দু’বছর পরেই লোকসভা ভোট। এনডিএ-তে থেকেও নিজের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি ধরে রাখা নীতীশ তাই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোটের মুখ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।
নীতীশের পাশে থাকা নিয়ে সংশয়ে আরজেডি-কংগ্রেস। কারণ, ২০১৫ সালে বিজেপিকে ছেড়ে জেডিইউ-কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েন নীতীশ। কিন্তু দু’বছর পরেই বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান। সূত্রের মতে, জোট প্রশ্নে নীতীশ কী সিদ্ধান্ত নেন, তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আরজেডির জগদানন্দ সিংহ। তবে তাঁরা ইঙ্গিতও দিয়েছেন, বিজেপির হাত ছাড়লে আরজেডি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পটনার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস ও আরজেডির শীর্ষ নেতৃত্ব যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গিয়েছে।