—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নয়াদিল্লি, ১৯ ডিসেম্বর: আজ সংসদ চত্বরে ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় মদত দিয়েছেন রাহুল গান্ধী, তাই তাঁর লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদে থাকার যোগ্যতা নেই বলে বিকেলে সরব হলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। তাঁর কথায়, ‘‘সভ্য সমাজে এমন আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না। রাহুল যা করেছেন, তা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়।’’
শিবরাজের এই মন্তব্যের সামান্য আগেই কংগ্রেস অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাহুল এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। রাহুল সকালের ধাক্কাধাক্কি নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের বদলে ফের শিল্পপতি গৌতম আদানির ঘুষকাণ্ডের অভিযোগটিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। রাহুলের কথায়, “শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আনা ঘুষের অভিযোগকে নিয়ে হইচই শুরু হয়। বিজেপি তা আটকাতে তৎপর ছিল। এর পর বাবাসাহেব অম্বেডকরের চিন্তার বিরোধিতা করে কুমন্তব্য করেন অমিত শাহ সংবিধান বিরোধী। আজ আবার নতুন ভাবে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। আমরা অম্বেডকরের মূর্তির সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে সংসদে যাচ্ছিলাম। সিঁড়িতে বিজেপির সাংসদেরা পথরোধ করে দাঁড়ান হাতে পোস্টারের ডান্ডা নিয়ে। তাঁরা আমাদের ভিতরে যেতে বাধা দেন।” তাঁর কথায়, “এখন আবার মূল বিষয়কে ঘোরাতে চাইছেন। আসল বিষয় হল, এঁরা অম্বেডকরকে অপমান করেছেন, এঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং শাহের পদত্যাগ করা উচিত।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, তিন জন বিজেপি সাংসদ ধাক্কাধাক্কি করেছেন রাহুলের সঙ্গে। খড়্গের কথায়, “নতুন তথ্য উঠে আসছে যে আমাদের মহিলা সাংসদকেও আক্রমণ করেছেন বিজেপি সাংসদেরা। ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিজেপি কর্তারা মুম্বই এবং কলকাতায় কংগ্রেস অফিস ভাঙচুর করার চেষ্টা করেছেন।’’ খড়্গের কথায়, “অমিত শাহ অম্বেডকরকে নিয়ে যা বলেছেন, তা নিন্দনীয়। প্রধানমন্ত্রী ওঁকে বরখাস্ত করুন। এই বিষয়টির উপর থেকে নজর ঘোরাতে এরা অন্য পন্থা নিয়েছে। সংসদের প্রবেশপথ মকরদ্বারের সামনে বিজেপি সাংসদেরা এমন ধাক্কা দেন যে, আমি ভারসাম্য রাখতে না পেরে বসে পড়ি।” বিজেপি যখন আহত দুই সাংসদের বিষয়টি তুলে ধরতে মরিয়া, তখন দলিত নেতা খড়্গের সঙ্গে বিজেপি সাংসদদের আচরণ নিয়ে স্বর তুলেছে কংগ্রেস। দলের সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, ‘‘অম্বেডকর নিয়ে কুকথা বলার পরে আজ খড়্গের মতো প্রবীণ দলিত নেতার উপর হামলা চালিয়েছে বিজেপি সাংসদেরা। এর থেকেই ওদের দলিত বিরোধী মানসিকতা বোঝা যাচ্ছে।’’
আজকের ঘটনায় কংগ্রেস নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে মনে করছে বিজেপি। বিশেষ করে প্রতাপচন্দ্র ষড়ঙ্গীর মতো প্রবীণ সাংসদ যে ভাবে শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে তারা, তাতে বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে রাহুলের বিরুদ্ধে বড় মাপের প্রচারে নামতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আগামিকালও মকর দ্বারের সামনে রাহুল তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের মারমুখী ভূমিকার প্রতিবাদ জানিয়ে জানাতে চায় বিজেপির। এ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে পারেন স্পিকার ওম বিড়লা। দলের লক্ষ্যই হল, সব দিক থেকে রাহুলকে নিশানা করা। বিজেপি নেতৃত্ব ভাল করেই বুঝতে পারছেন, রাহুলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, তাতে অন্য বিরোধী দলগুলির পক্ষে সরাসরি রাহুলকে সমর্থন করা যথেষ্ট অস্বস্তিকর। তাই আজ থেকেই বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিজেপি।
তবে একটি বিষয় ঘরোয়া ভাবে বিজেপি নেতারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, অম্বেডকর প্রসঙ্গে অমিত শাহের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে দল যতটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল, আজ উস্কানিতে পা দিয়ে রাহুল গান্ধী ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ায় সেই বিতর্ক থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে দল।