Assembly Elections 2024

তাস মহিলা-ভাতা, খয়রাতিই সত্য?

পশ্চিমবঙ্গে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-কে হাতিয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেস সাফল্য পেয়েছিল। এ বার মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম একই পথে মহিলাদের আর্থিক ভাতা প্রকল্প দিয়ে বাজিমাত করল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৪
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

ভাতাই কি ভবিষ্যৎ!

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-কে হাতিয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেস সাফল্য পেয়েছিল। এ বার মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম একই পথে মহিলাদের আর্থিক ভাতা প্রকল্প দিয়ে বাজিমাত করল। মহারাষ্ট্রে লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরেও মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫০০ টাকা করে দেওয়ার ‘লাড়কি বহিন’ যোজনা চালু করে বিজেপি জোট বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরল। একই ভাবে ঝাড়খণ্ডে অগস্টে হেমন্ত সোরেনের সরকার ‘মাইয়া সম্মান’ যোজনা চালু করে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে পাঠাতে শুরু করেছিল। মহিলা ভোটব্যাঙ্কের আশীর্বাদ নিয়ে হেমন্তও ক্ষমতায় ফিরেছেন।

অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, রাজ্যের রাজকোষের ঘাটতির চিন্তা শিকেয় তুলে রেখে এই খয়রাতিই কি রাজনীতির ভবিষ্যৎ? তা হলে রাজ্য সরকারগুলি দেউলিয়া হয়ে পড়লে তার কথা কে ভাববে?

Advertisement

শুধু পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নয়। কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার মহিলাদের ভাতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে মাসে দু’হাজার টাকার ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্প চালু করেছে। তেলঙ্গানায় একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় দু’হাজার টাকা মাসিক ভাতার ‘মহা লক্ষ্মী’ প্রকল্প চালু করেছিল। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্পে সাফল্য পেয়েছিল। এই সাফল্য দেখেই মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার ‘লাড়কি বহিন’ বা ‘আদরের বোন’ যোজনা চালু করে। ভোটের আগেই পাঁচ মাসের পাওনা বাবদ সাড়ে সাত হাজার টাকা মহিলাদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। মহারাষ্ট্রের বাজেটে মোট এক লক্ষ কোটি টাকার খয়রাতির ঘোষণা করেছিল মহায্যুতি সরকার।

মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড সরকার মহিলা ভাতা প্রকল্প চালু করায় রাজ্যের ঋণের বোঝা বেড়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি’ (এনআইপিএফপি) রিপোর্ট দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প ধারের টাকায় চলছে। এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ‘রেউড়ি’ বা তিলগুড়ের মিষ্টি বিলির খয়রাতি রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হন। কিন্তু লোকসভা ভোটে আসন কমে যাওয়ার পরে তাঁর দলকেও সেই খয়রাতির রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরতে হয়েছে।

কী ভাবে মহিলা ভাতা প্রকল্প ভোটের মোড় ঘুরিয়েছে? বিজেপির অঙ্ক, মহারাষ্ট্রের ৯.৬৪ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ২.৫ কোটি মহিলা ‘লাড়কি বহিন’ যোজনায় টাকা পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে যদি অর্ধেক মহিলাও বিজেপি জোটকে ভোট দেন, তা হলে ভোটারদের ১০ শতাংশ ভোট এখানেই নিশ্চিত হয়ে যায়। ২০১৯-এর তুলনায় এ বারের বিধানসভা ভোটে ৫৩ লক্ষ বেশি মহিলা ভোটার ছিলেন। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডে ১.২৮ কোটি মহিলা ভোটারের মধ্যে জেএমএম-কংগ্রেস সরকার ৫২ লক্ষ মহিলার হাতে ‘মাইয়া সম্মান’ যোজনার টাকা তুলে দিয়ে বাজিমাত করেছে।

অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, এই টাকায় কি সত্যিই মহিলাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে? না কি যাঁদের প্রয়োজন নেই, ভোট কিনতে তাঁদের হাতেও টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে? মহারাষ্ট্র সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘লাড়কি বহিন’ যোজনার শর্ত হিসেবে যাঁদের আয় বছরে ২.৫ লক্ষ টাকার কম, সেই ১ কোটি পরিবারের মহিলার টাকা পাওয়া উচিত। কিন্তু ভোটের স্বার্থে যাচাই না করে ২.৫ কোটি মহিলার নাম প্রকল্পে ঢোকানো হয়েছে। অর্থাৎ অর্থ অপচয় হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে বিধানসভা ভোটে যে এই খয়রাতির রাজনীতি চলবে, তারও ইঙ্গিত মিলছে। আগামী বছরের গোড়াতেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল মহিলাদের নিখরচায় বাস যাত্রার মতো ‘রেউড়ি’র যে প্রয়োজন রয়েছে, তা বোঝাতে প্রচারে নেমেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement