ফাইল চিত্র।
আগামী কাল, ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে সিবিআইয়ের অধিকর্তা ঋষিকুমার শুক্লের কার্যকালের মেয়াদ। তদন্তকারী সংস্থার নতুন অধিকর্তা কে হবেন তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গ তাকিয়ে আছে সিবিআইয়ের নতুন প্রধানের দিকে। কারণ, অর্থলগ্নি সংস্থা, গরু-কয়লা পাচারের মামলাগুলির অগ্রগতি হবে, না কি থমকে যাবে, তা কিছুটা নির্ভর করবে নতুন অধিকর্তার ভূমিকার উপর। বর্তমান অধিকর্তার আমলে সিবিআই দুর্নীতির অভিযোগে বড় মাপের কোনও রাজনীতিবিদের বাড়ি তল্লাশি বা গ্রেফতার করেনি। সেই ধারা বজায় থাকবে কি না সেই প্রশ্ন নবান্নের প্রশাসনিক পরিসরেও এখন তীব্র। সূত্রের খবর, সিবিআই অধিকর্তা নির্বাচন করেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কমিটি। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের কোনও এক কর্তাও। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী সোমবার সকালে বলেন, ‘‘অধিকর্তা নির্বাচনের বৈঠক এখনও ডাকা হয়নি।”
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন পার্সোনেল মন্ত্রক এবং ভিজিল্যান্স কমিশন তিনটি নাম পরবর্তী অধিকর্তার জন্য প্রস্তাব করেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ১৯৮৪ -র ব্যাচের আইপিএস অফিসার রাকেশ আস্থানা এবং ওয়াই সি মোদী। তা ছাড়া রয়েছেন কেরল পুলিশের ডিজি লোকনাথ বেহেরা। উনি ১৯৮৫ ব্যাচের আইপিএস। তিন জনেরই সিবিআইয়ে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠকে এঁদের মধ্য থেকে যে কোনও এক জনকে বেছে নেওয়ার কথা।
ঘটনাচক্রে ২০১৯-এ রাকেশ আস্থানার সঙ্গে তৎকালীন সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মার বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে সরকার উভয়কেই ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। রাকেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছিলেন অলোক। পরে সরকার তার তদন্ত শুরু করে। অলোক বর্মার জায়গায় অধিকর্তা করা হয় তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের ডিজি ঋষি শুক্লকে। সিবিআই অবশ্য রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে যাবতীয় তদন্ত সম্পূর্ণ করে তাঁকে ক্লিনচিট দিয়েছে। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত তা মেনেও নিয়েছে।
সূত্রের দাবি, ওয়াই সি মোদীও সিবিআইয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। গুজরাত দাঙ্গার বিভিন্ন পর্বে সিবিআই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। লোকনাথ বেহেরা সিবিআইয়ে কর্মরত থাকাকালীন গ্রাহাম স্টেইনস হত্যা মামলা, পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার তদন্ত করেছিলেন। রাকেশ আস্থানা তদন্ত করেছেন বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির। ১৯৯৬ সালে লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছিলেন তিনি। সেই মামলার সূ্ত্রেই লালুপ্রসাদকে কারাবাসে যেতে হয়। আস্থানা বরাবরই কঠোর সিদ্ধান্তে নিতে সক্ষম বলে মনে করেন তাঁর সঙ্গে কাজ করা অফিসারেরা। তিনি এখন বিএসএফের ডিজি। গরু পাচারের মামলায় কয়েক জন বিএসএফ অফিসারকে বরখাস্ত করেছেন তিনি। সিবিআইয়ের একাংশের দাবি, তিনি বিশেষ অধিকর্তা থাকাকালীনই অর্থলগ্নি সংস্থা এবং নারদ মামলার তদন্ত সবচেয়ে বেশি গতি পেয়েছিল।
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বৈঠকটি না হওয়ায় এ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সরকারের প্যানেল যদি প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলনেতা না মানেন, তা হলে নতুন প্যানেল পাঠিয়ে ফের নির্বাচন করতে হবে। তত দিন সিবিআই চালাবেন সংস্থার প্রবীণতম কর্তা।