ফাইল চিত্র।
অখিলেশ যাদব খুব হাসছেন। বিজেপির নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ধুয়ো ধরে শোরগোল শুরু করেও হঠাৎই কুলুপ এঁটেছেন মুখে। কেন্দ্রীয় জিএসটি কর্তারা কি এখন একে অপরের মুখ চেয়ে আফসোস করছেন— মিসটেক মিসটেক?
এ যেন সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ চলচ্চিত্রের গল্প। ‘বেলুচিস্তান থেকে আসছি’ বলে দাড়িওলা দুটো লোক এক কিশোরকে গাড়িতে তুলে জানতে চায় সোনার কেল্লা কোথায়? সে বলে, ‘জানি না, মুকুল জানে।’ তারা জানতে চায়, তোমার নাম তা হলে কী? কিশোরটি বলে, ‘আমার নামও মুকুল। তবে...’
দু’জনেই মুকুল। একই শহরের একই রাস্তায় বাড়ি দু’জনের।
দু’জনেই পি জৈন। একই শহর কনৌজের একই রাস্তা জৈন রোডে বাড়ি দু’জনের। দু’জনেরই পারিবারিক সুগন্ধীর ব্যবসা। কিন্তু কী পারিবারিক, কী ব্যবসায়িক— কোনও সম্পর্কই নেই দুই জৈনের।
যে পি জৈনের কনৌজ ও কানপুরের বাড়ি ও কারখানায় তল্লাশি করে ১৯৪ কোটি নগদ ও ২৪ কিলোগ্রাম সোনার বিস্কুট উদ্ধার হল, তাঁর নাম পীযূষ জৈন। চার দিন ধরে তল্লাশি চলাকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বললেন, “চার দিকে কেমন যেন আতরের গন্ধ বেরোচ্ছে! এ কি সমাজবাদী আতরের গন্ধ! দেওয়াল খুঁড়লেও তো দেখি কেবল নোটের বান্ডিল বেরোচ্ছে!” ভোটের আগে কানপুরে মেট্রো রেলের সূচনা করে মঙ্গলবার সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বললেন, “দুর্নীতির গন্ধ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৭-র আগে তারা যে টাকা বেআইনি ভাবে কারও কারখানা, কারও বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিল, তা এখন তল্লাশিতে বেরিয়ে পড়ছে। যে নোটের পাহাড় দেশবাসী দেখছেন, সেটিই ছিল তাদের আমলের সাফল্য।” তাঁর সুরে বিজেপি নেতারা ‘সমাজবাদী আতর’ নিয়েও নানা রকম মন্তব্য করে দাবি করেন, পীযূষ জৈনই ভোটের আগে অখিলেশের প্রচারের জন্য নতুন এই সুগন্ধী বাজারে ছেড়েছেন!
বুধবার অবশেষে মুখ খুলে বোমাটি ফাটিয়েছেন অখিলেশ। জানিয়েছেন, এই জৈন সেই জৈন নয়। ‘সমাজবাদী আতর’ বাজারে এনেছেন পুষ্পরাজ ওরফে পম্পি জৈন। তিনি এসপি-র টিকিটে বিধান পরিষদের সদস্য। বছর ষাটেক বয়সের এই ব্যবসায়ীর নামে অপরাধের কোনও অভিযোগ নেই। তিনি এসপি-র নেতা হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়। এঁর আর কোনও ব্যবসাও নেই।
আর ওই জৈন? অখিলেশ জানাচ্ছেন, বিজেপির সঙ্গী হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন ওই পীযূষ জৈন। কনৌজের লোক হলেও সপরিবার থাকেন কানপুরে। তবে কনৌজে পুরনো বাড়িতেও সম্প্রতি কারখানা খুলেছিলেন। আতরের পাশাপাশি গুটকা আর পান মশলার কোম্পানিগুলোর কাছে ভোজ্য সুগন্ধী বিক্রির ব্যবসা শুরু করেই রমরমা হয়েছে পীযূষের ব্যবসার। তাঁর সঙ্গে এসপি-র যেমন কোনও লেনদেন নেই, এসপি-র বিধান পরিষদের সদস্য পম্পি জৈনেরও নেই। তবে পীযূষ তো এখন ১৫ দিনের জেল হেফাজতে। অযথা এসপি-র নামে অভিযোগ করার আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাজেয়াপ্ত করা মোবাইলের কল লিস্টটা একটু খতিয়ে দেখুন। তা হলেই বুঝবেন, গুটকা লবির মাধ্যমে বিজেপির কোন কোন নেতার সঙ্গে পীযূষ জৈনের লেনদেন। ওই ২০০ কোটি টাকার উৎসের সন্ধানও মিলে যাবে। অখিলেশ বলেন, “আসলে মিসটেক হয়ে গিয়েছে কর-কর্তাদের। ডিজিটাল মিসটেক। নির্দেশ এসেছে এসপি-র নেতা আতর ব্যবসায়ী পি জৈনের বাড়ি-কারখানা তল্লাশি করতে, তাঁরা করেছেন বিজেপি-বন্ধু আতর ব্যবসায়ী পি জৈনের বাড়ি-কারখানায় তল্লাশি!”
ফেরে পড়ে জিএসটি কর্তারা অবশ্য বলছেন, কোনও মিসটেক হয়নি। তাঁদের কাজ কর ফাঁকি ধরা, যা তাঁরা করেছেন। এ বার কেউ কেউ তাতে রাজনীতির রং লাগাচ্ছেন। এর দায় তাঁদের নয়। তবে আতর নিয়ে আর কথাই বলছেন না বিজেপি নেতারা। ভোটের হাওয়া বড়ই গোলমেলে!