আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস–এআইইউডিএফ সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা দিতেই হাইলাকান্দির রাজনীতিতে চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে। সুযোগ বুঝে শিবির বদল করছেন নেতা-কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত রাজনীতির জগতের বিপরীত মেরুর দুই নেতা বদরউদ্দিন আজমল ও তরুণ গগৈ হাতে হাত মিলিয়ে ভোট-ময়দানে নামলে হাইলাকান্দির রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুই শিবিরেই আলোচনা চলছে।
বর্তমানে জেলার তিনটি বিধানসভা আসনই কংগ্রেসের দখলে। দু’দল জোট গড়লে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ–এর মধ্যে আসন বণ্টন কী ভাবে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সকলে। তাতে লাভ-লোকসানের হিসেবও কষছেন অনেকে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে হাইলাকান্দির দু’টি আসনে এআইইউডিএফ ছিল দু’নম্বরে। ২০১১ নির্বাচনে আলগাপুর কেন্দ্রে বদরউদ্দিনের দল প্রার্থী দেয়নি। এআইইউডিএফ ওই আসনে অসম গণ পরিষদের প্রার্থী সহিদুল আলম চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়েছিল। ২০১৩ সালের উপনির্বাচনে ওই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এআইইউডিএফ প্রার্থী মেহেবুবুল হাসান ১ হাজারেরও কম ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী মন্দিরা রায়ের কাছে পরাজিত হন। গত লোকসভা নির্বাচনে বদরউদ্দিনের দলের অবস্থা আরও মজবুত হয়। জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেই এআইইউডিএফ প্রথম স্থান দখল করেন।
এই পরিস্থিতিতে জোট হলে হাইলাকান্দিআগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস–এআইইউডিএফ সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা দিতেই হাইলাকান্দির রাজনীতিতে চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে। সুযোগ বুঝে শিবির বদল করছেন নেতা-কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত রাজনীতির জগতের বিপরীত মেরুর দুই নেতা বদরউদ্দিন আজমল ও তরুণ গগৈ হাতে হাত মিলিয়ে ভোট-ময়দানে নামলে হাইলাকান্দির রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুই শিবিরেই আলোচনা চলছে।তে আসন বণ্টন কী ভাবে হবে, তা নিয়ে দু’দলের নেতারা চিন্তিত। সমঝোতা-সূত্র অনুযায়ী, কোনও কেন্দ্রে যে দলের আধিপত্য রয়েছে, সেটি ওই দলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন হাইলাকান্দির কাটলিছড়া কেন্দ্রে বদরউদ্দিনের দলের দিকেই হাওয়া বইছে বলে স্থানীয় এআইইউডিএফ নেতা-কর্মীদের দাবি। তাঁরা সেখানে কোনও ভাবেই কংগ্রেস প্রার্থী চাইছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, জোট হলে কাটলিছড়া আসন থেকে পরপর ছ’বারের বিধায়ক গৌতম রায়কেই প্রার্থী করা হবে। তিনি ভোটে জিতলে ওই কেন্দ্রের এআইইউডিএফ নেতা-কর্মীদের কংগ্রেস বিধায়কের অধীনে থাকতে হবে। সে দিকে তাকিয়ে বিকল্প রাস্তার খোঁজ শুরু করেছেন সকলে।
আজ তা স্পষ্ট হল লালা শহরে। হাইলাকান্দির এআইইউডিএফ নেতা দিলওয়ার হোসেন বড়ভুঁইঞার নেতৃত্বে দলীয় কর্মীরা বদরউদ্দিন শিবির ত্যাগ করেছেন। তাঁরা বদরউদ্দিনকে ‘ধর্মের ব্যবসায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বদরউদ্দিন মুসলিম সমাজকে ব্যহার করছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। দলত্যাগীরা কয়েক দিনের মধ্যেই যে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ দলে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। দিলওয়ারের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে— তাঁরা কংগ্রেসেই যোগ দিতে চলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজমল এক জন সাম্প্রদায়িক নেতা। উনি ধর্মের নামে সমাজকে ভাঙতে চাইছেন।’’
এ দিকে কাটলিছড়া কেন্দ্রে এআইইউডিএফ-এর উত্থান দেখে কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য সুজামউদ্দিন লস্কর কয়েক দিন আগে দলত্যাগ করে বদরউদ্দিনের সঙ্গে হাত মেলান। তিনি নিজেকে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে কাটলিছড়ার প্রার্থী হিসেবে প্রচারও শুরু করেছেন। কিন্তু জোট হলে তাঁর কী হবে, সে নিয়ে সুজামের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে সুজাম বলেন, ‘‘রাজনীতিতে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। সময় বুঝেই পদক্ষেপ করব।’’
একই ভাবে আলগাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পাঁচগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য তথা গৌতম-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা নিজামউদ্দিন লস্করও সম্প্রতি দলত্যাগ করে এআইইউডিএফ–এ যোগ দিয়েছেন। প্রশ্ন ছড়িয়েছে, জোট-রাজনীতিতে নিজামবাবুর ভবিষ্যৎ কী হবে? তাঁর অনুগামীদের একাংশের বক্তব্য— রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম রায়ের স্ত্রী মন্দিরাদেবীর বদলে ওই কেন্দ্রে এআইইউডিএফ–এর নিজামউদ্দিনকে প্রার্থী করার আশা ক্ষীণ।
হাইলাকান্দি কেন্দ্রের ছবিটাও এক। ওই কেন্দ্রের এআইইউডিএফ নেতা-কর্মীরা আঁতাঁতের খবরে ক্ষুব্ধ। বরাকে দলের সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি জোটের বিরুদ্ধে। সমঝোতা হলে আমাদের দলের প্রচণ্ড ক্ষতি হবে। কারণ জেলায় প্রতি দিনই এআইইউডিএফ-এর সমর্থন বেড়ে চলেছে।’’ একই বক্তব্য হাইলাকান্দির যুব এআইইউডিএফ সভাপতি দুলন মজুমদারের। বদরউদ্দিনের দলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে গৌতম রায় কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, জোট চাইছেন গৌতম। তাতে কাটলিছড়া কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিশেষ সুবিধা হবে।