ফাইল ছবি
এক দলের প্রার্থী হিসেবে লোকসভা বা বিধানসভায় জিতে আসার পরে অন্য দলে যোগ দিলে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজের বিষয়ে স্পিকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের ক্ষমতা বেঁধে দেওয়া নিয়ে ঐকমত্য তৈরি না হওয়ায় এ বার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। আগামী অগস্ট মাসে লোকসভা ও বিধানসভাগুলির স্পিকারদের সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
বিজেপির টিকিটে জিতে এসে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিলেও সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুকুল বিজেপিরই বিধায়ক। বিজেপি মুকুলের সদস্যপদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে আর্জি জানালেও প্রথমে স্পিকার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছিলেন না বলে অভিযোগ। পরে বিজেপি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাই কোর্ট স্পিকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে না বললেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। একাধিক রাজ্যেই স্পিকারের ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, স্পিকার দীর্ঘ দিন ধরে এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। লোকসভাতেও শিশির অধিকারীদের সাংসদ পদ খারিজের জন্য তৃণমূলের আবেদনের পরে দীর্ঘ দিন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘‘লোকসভায় তৃণমূলের আবেদনের ভিত্তিতে একটি শুনানি হয়েছে। তবে গত নভেম্বরে স্পিকারদের সম্মেলনে সকলেই মত দিয়েছিলেন, এ ক্ষেত্রে স্পিকারদের ক্ষমতা কম হওয়া উচিত। রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সি পি জোশীর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়। কিন্তু স্পিকারদের ক্ষমতা কোথায়, কতখানি কাটছাঁট হওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি।’’ স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ আদালতে যেতে পারেন। আদালত সেখানে খতিয়ে দেখতে পারে, স্পিকার সংবিধান মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না। কিন্তু স্পিকার কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে বসে থাকলে আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, তা স্পষ্ট নয়। রবিবার লোকসভার স্পিকারের পদে ওম বিড়লার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। তার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিড়লা বলেন, ‘‘স্পিকারের ক্ষমতা কাটছাঁট নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় সিদ্ধান্তগ্রহণের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। যাতে কোনও স্পিকার সিদ্ধান্ত না নিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিতে না পারেন। অগস্ট মাসে স্পিকারদের সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’’
গত তিন বছরে স্পিকারদের ক্ষমতা নিয়ে চিন্তাভাবনার পাশাপাশি ওম বিড়লা লোকসভার কাজে গতি আনা এবং শূন্য কালে সাংসদদের নিজের এলাকার সমস্যা বেশি করে তুলে ধরার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিন বছরে তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাগজ ও আনুষঙ্গিক খরচ কমিয়ে ৬৬৯ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন তিনি। বিড়লা জানান, সংবিধান ও সাংবিধানিক অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে তরুণদের অবহিত করতে তিনি প্রচার অভিযান শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন সংসদ ভবন তৈরির কাজও মোটামুটি সময় মেনেই এগোচ্ছে। অক্টোবরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে বছরের শেষে শীতকালীন অধিবেশন নতুন ভবনেই হবে। না হলে নতুন বছরের শুরুতে বাজেট অধিবেশন নতুন সংসদ ভবনে বসবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।