রাজনীতির অন্দরে দক্ষিণ ভারতীয় তারকাদের দাপট বহু দিনের। এম জি রামাচন্দ্রন থেকে জয়ললিতা, চলচ্চিত্র জগতে যেমন, ভোটের রাজনীতিতেও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। রিল লাইফ থেকে কট্টর রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন এমন তারকাদের হদিশ রইল গ্যালারির পাতায়।
নন্দমুরি তারকা রামারাও(এনটিআর): এই চলচ্চিত্র অভিনেতা ১৯৮২ সালে হায়দরাবাদে তেলুগু দেশম পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন। এর সদর দফতর হায়দরাবাদের এন টি আর ভবন, বানজারা হিলসে। একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, চিত্রনির্মাতা এবং রাজনীতিক এনটিআর তিন বার অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেছেন।
এম জি রামচন্দ্রন: ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দশ বছর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রখ্যাত তামিল অভিনেতা এবং চিত্রনির্মাতা রামচন্দ্রন ওরফে এমজিআর। সাধারণের কাছে তিনি ‘মাক্কাল তিলাগাম’ (জনগণের রাজা) নামে জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৫৩ সালে ডিএমকের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন এমজিআর। ডিএমকের প্রতিষ্ঠাতা আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর পর ডিএমকে ছেড়ে দেন। তখন ডিএমকে-র নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন করুণানিধি। বিরোধী দল হিসেবে এমজিআর গঠন করেন এআইএডিএমকে।
জয়রাম জয়ললিতা: প্রবাদপ্রতিম তামিল অভিনেতা এম জি রামচন্দ্রনের হাত ধরে তামিল রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ জয়ললিতার। সাধারণের কাছে তিনি ‘আম্মা’ নামেই জনপ্রিয়। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। এমজিআরের মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন ‘আম্মা’। মোট তিনবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মৃত্যু হয় তাঁর।
চিরঞ্জীবী: তিনি একাধারে সুপারস্টার এবং রাজনীতিক। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা ২০০৮ সালে সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে যোগ দেন। গঠন করেছিলেন নিজের আলাদা দল ‘প্রজা রাজ্যম পার্টি’। ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন।
পবন কল্যাণ: অভিনয় দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে রাজনীতিতে যোগ দেন পবন। নিজের আলাদা দলও গঠন করেছেন তিনি, যার নাম ‘জন সেনা’। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ফোর্বসের ১০০ জন ভারতীয় সেলিব্রিটির তালিকায় ২৬ নম্বরে ছিলেন তিনি।
বিজয়কান্ত: সেলুলয়েডের জনপ্রিয়তায় ইনিও কম যান না। ২০০৫ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ক্যাপ্টেন বিজয়কান্ত। গঠন করেন নিজের দল ‘দেশীয় মুরপোক্কু দ্রাবিড় কাঝাগম’। ২০১৬ সালে ভোটের প্রচারে ‘থালাইভা’ রজনীকান্তের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে বিজয়কান্তের সমালোচনায় মুখর হন রজনী-ভক্তেরা। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি তামিল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন।
সুরেশ গোপী: সিনেমার পর্দায় সাহসী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় বহু বার দেখা গিয়েছে এই মালয়ালম অভিনেতাকে। বর্তমানে তিনি রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য।
আর শরৎ কুমার: এই দক্ষিণী অভিনেতা ২০০৬ সালে ডিএমকে ছেড়ে এআইএডিএমকেতে যোগ দেন। ২০০৭ সালে ‘অল ইন্ডিয়া সামাথুভা মাক্কাল কাটচি’ নামে নিজের আলাদা দল গঠন করেন তিনি।
রজনীকান্ত: তিনি পর্দায় ধরা দিলে উন্মাদনার ঝড় ওঠে। ১৯৭৫ সাল থেকে তাঁর অন্ততপক্ষে ১৭৫টি ছবি বক্স অফিসে রেকর্ড ব্রেক করেছে। দক্ষিণ ভারতের পরিচিত প্রবণতা অনুসরণ করে রজনীকান্ত রাজনীতির ময়দানে পা রাখুন, এমনটা অনুগামী এবং ভক্তরা দীর্ঘ দিন ধরেই চাইছিলেন। রাজনীতিতে যে তিনি পা রাখবেন, সে ইঙ্গিত ‘থালাইভা’ নিজেও দিতে শুরু করেছিলেন সম্প্রতি। গত বছরই রাজনীতির ময়দানে পা রাখার কথা ঘোষণা করেছেন রজনী।
কমল হাসন: রাজনীতিতে পা রাখার ইঙ্গিত গত বছরই দিয়েছিলেন এই দাপুটে অভিনেতা। বুধবার মাদুরাই থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে দল ঘোষণা করলেন তিনি। তাঁর দলের নাম মাক্কাল নিধি মইয়ম। তবে শুধু ‘রাজনীতি’ করার জন্য রাজনীতিতে আসতে চান না। তাঁর দাবি, তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে বদল সম্ভব। রাজনীতিতে এসে সেই পরিবর্তন আনাই লক্ষ্য ৬২ বছরের এই অভিনেতার।